কালো টাকার খোঁজে আয়কর হানা দেশ জুড়ে

কলকাতার বেশ কিছু গয়নার দোকানে অভিযান চালাতে শুরু করেছে আয়কর দফতর। অভিযোগ উঠেছে, ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী পাঁচশো এবং হাজারের নোট বাতিল করে দেওয়ার পরে বেশ কিছু লোক ভিড় জমিয়েছিলেন কিছু গয়নার দোকানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৭
Share:

কলকাতার বেশ কিছু গয়নার দোকানে অভিযান চালাতে শুরু করেছে আয়কর দফতর।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, ৮ নভেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী পাঁচশো এবং হাজারের নোট বাতিল করে দেওয়ার পরে বেশ কিছু লোক ভিড় জমিয়েছিলেন কিছু গয়নার দোকানে। উদ্দেশ্য, আচমকা অচল হয়ে যাওয়া পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোটগুলি ব্যবহার করে ফেলা। পরে সময় মতো গয়না বিক্রি করে আবার টাকা নিয়ে বাড়িতে রেখে দেওয়া।

বৃহস্পতিবার রাতে আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে থেকেই অন্য একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতার কয়েকটি গয়নার দোকানে তল্লাশি শুরু হয়েছিল। কিন্তু ৮ নভেম্বরের পরে নতুন করে বিশাল অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগ আসতে শুরু করে। এক আয়কর কর্তার কথায়, ‘‘বেশ কয়েকটি দোকানের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা হচ্ছে, সেখানে ৮ তারিখের রাতের পর থেকে কত টাকার লেনদেন হয়েছে।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, দিল্লিতেও একই ভাবে অভিযান চালাতে শুরু করেছে আয়কর দফতর। দিল্লির চাঁদনি চক, করোল বাগ-সহ বেশ কিছু জায়গায় এ দিন অভিযান চালানো হয়েছে। দিল্লির আশপাশে লুধিয়ানা, চণ্ডীগড় থেকেও এই অভিযানের খবর এসেছে। অভিযোগ, বেশ কিছু সোনার দোকান বাতিল হয়ে যাওয়া পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোটের বিনিময়ে চড়া দামে সোনা বিক্রি করছে।

বেশ কিছু ব্যবসায়ী হাজার টাকা নিয়ে আটশো টাকার খুচরো এবং পাঁচশো টাকার নোটের পরিবর্তে চারশো টাকার খুচরো দিচ্ছেন বলেও খবর এসেছে আয়কর দফতরের কাছে। সেই সব ব্যবসায়ীদের ডেরাতেও হানা দিতে শুরু করেছেন আয়কর অফিসারেরা।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, যে ক্রেতারা সোনা কিনে নিজেদের টাকা সুরক্ষিত করতে চাইছেন, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তাঁরাও বিপদে পড়বেন। কী ভাবে? এমনিতে যে কোনও পঞ্চাশ হাজার টাকার উপরে যে কোনও নগদ লেনদেনে ক্রেতার প্যান নম্বর জেনে রাখার কথা বিক্রেতাদের। অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘অবাধে সোনা বিক্রি করে এবং খুচরো টাকা দিয়ে পাঁচশো এবং হাজার টাকা যাঁরা নিয়েছেন, সেই টাকা তাঁরা যখন ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাবেন, তখন বিপদে পড়বেন। তাঁদের দুশো শতাংশ জরিমানা করা হবে।’’

শুধু গয়না নয়, বাড়িতে জমিয়ে রাখা কালো টাকায় বিমান ও রেলের টিকিটও কাটা হচ্ছে বলে খবর। উদ্দেশ্য, পরে বাজারে নতুন পাঁচশো এবং দু’হাজার টাকার নোট এসে গেলে ওই টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে এই উদ্দেশ্যেও জল ঢেলে দিয়েছে রেল ও বিমান মন্ত্রক। বিমান সংস্থারা বলে দিয়েছে, টিকিট বাতিল করলে টাকা ফেরত মিলবে না। আর রেলের বক্তব্য, দশ হাজার টাকার বেশি হলেই ফেরতমূল্য সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।

আয়কর কর্তারা হেসে বলছেন, ‘‘কোনও উপায়েই বাঁচা যাবে না। হয় ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে। নয় নষ্ট করে ফেলতে হবে ওই টাকা।’’

কীসে মিলছে এই প্রত্যয়? এক আয়কর কর্তার কথায়, ‘‘প্রথমত, সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বাড়িতে লুকোনো টাকা ব্যাঙ্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সেটা সফল। কারণ, গয়না বা ট্রেন বা বিমানের টিকিট কাটলে সেই টাকা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্কে জমা পড়বে।’’

তা ছাড়া কেন্দ্রের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এখন কিনে নেওয়া গয়না বা ট্রেন-বিমানের টিকিট পরে বাতিল করতে গেলে আর নগদ কড়কড়ে টাকা পাবেন না। সেই টাকা চেক মারফত ফেরত দেওয়া হবে। সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়লেই ক্যাঁক করে চেপে ধরবেন আয়কর অফিসারেরা।

আয়কর দফতর সূত্রের খবর, এখন যে মানুষ লাইন দিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিচ্ছেন, তার উপরেও নজরদারি চলছে। উদাহরণ দিয়ে এক কর্তা জানান, যে মুদির দোকানের মালিক প্রতিদিন ব্যাঙ্কে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জমা দেন, এখন যদি দেখা যায় তিনি পাঁচ লক্ষ টাকা জমা দিচ্ছেন, তা হলেই চেপে ধরা হবে তাঁকে।

আয়কর কর্তা বলেন, ‘‘স্বেচ্ছা-আয় ঘোষণার প্রকল্পে এই বছরে ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাত হাজার কোটি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। সরকারকে কর ও জরিমানা মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ টাকা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। তার পরেও যাঁরা কালো টাকা রেখে দিয়েছিলেন, তাঁরা কী কী উপায়ে টাকা বাঁচাতে পারেন, কেন্দ্রীয় সরকার আগে থেকে সে সব হিসেব করেই এই রাস্তা নিয়েছে।’’

আয়কর দফতরের দাবি, পাঁচশো এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে কেউ যদি নিজের কালো টাকা ঘোষণা করেন, তা হলে তাঁর কর এবং জরিমানা নিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা সরকারের ঘরে চলে যাবে। ঘুরপথে কেউ ‘চালাকি’ করে যদি টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করেন, তাঁর জন্য আগামী দিনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন