অসমে তৈরি হচ্ছে বিশালকার পকাতা। —ফাইল ছবি
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে অনাহার, বঞ্চনার বিরুদ্ধে অনশনের বেশ ক’টি ঘটনা সামনে এল অসমে।
নলবাড়ি জেলার আমারা গ্রামে একটি পরিবার প্রায় ১৫ দিন অনাহারে দিন কাটাচ্ছিল। জানতে পেরে জেলাশাসক নাদিরা জেসমিন তাঁদের জন্য ১৫ দিনের খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠান। জানা গিয়েছে, পরিবারের গৃহকর্তা বীরেন চক্রবর্তী গুয়াহাটিতে ঠিকা কর্মীর কাজ করতেন সামান্য বেতনে। দু’বছর ধরে তিনি পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। স্ত্রী কমলা চক্রবর্তী ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। অর্থাভাবে তাঁদের কোনও চিকিৎসা করানো হয়নি। ছেলে ব্রজেন এই অভাবের মধ্যেও ডিস্টিংশন নিয়ে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করায় স্থানীয় বিধায়ক অশোক শর্মা তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রজেন নিজেও অত্যন্ত অসুস্থ। মেয়ে নবনীতা নলবাড়ি কলেজে পড়ত। কিন্তু বাবা-মায়ের সেবা করার জন্য ষষ্ঠ সেমেস্টারে তাঁকেও পড়া ছাড়তে হয়েছে। আশপাশের মানুষের দয়ায় খাওয়া জোটে পরিবারের। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ তাঁরা খেতে পাননি।
এই পরিস্থিতিতে নবনীতার আবেদন, অন্তত সম্মানের মৃত্যুটুকু যেন পান বাবা-মা। খবর পেয়ে ঘোগরাপাড়ের সার্কেল অফিসার জিন্টি ডেকা তাঁদের বাড়িতে যান। তুলে দেন ত্রাণ সামগ্রী। জেলাশাসক নাদিরা জেসমিন জানাচ্ছেন, আপাতত প্রয়োজনীয় খাবার পাঠানো হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের অধীনে আর কী ভাবে ওই পরিবারকে সাহায্য করা যায়, তা বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্য দিকে, নগাঁও ও কাছাড় কাগজকলের কর্মীরা আজ স্বাধীনতা দিবস বয়কট করে অনশনে বসেছেন। গত দু’বছর ধরে তাঁরা আশ্বাস পেয়ে আসছেন, বেতন মিলবে, হবে সংস্থার পুনরুজ্জীবন। ২৭ ঘণ্টা অনশনের পরে আগামী ১৭ অগস্ট তাঁরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করবেন। আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠাবেন বলেও ঘোষণা করেছেন কাগজকলের এই কর্মীরা।
শিবসাগর, লখিমপুরে বেতন না পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা গত কয়েক দিন ধরে আমরণ অনশন চালাচ্ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত গত রাতে রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম ও সেচমন্ত্রী কেশব মহন্ত শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন। এর পর অনশন প্রত্যাহার করা হয়।
দেশে মহা ধুমধামে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের ছবিকে ম্লান করে দিচ্ছে এই সব ঘটনা। গত চার বছর ধরে মোদী সরকার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর স্লোগান দিয়ে আসছে। অসমেও এখন বিজেপিরই সরকার। ফলে বিরোধীরা এই পরিস্থিতির জন্য আঙুল তুলছেন নরেন্দ্র মোদী ও সর্বানন্দ সোনোয়ালের দিকে।