হাইড্রোজেন বোমার কম্পিউটার-বিস্ফোরণে ভারত আমেরিকারও আগে!

হাইড্রোজেন বোমার কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণে ভারত পথ দেখিয়েছিল গোটা বিশ্বকে! সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা অর্থাৎ হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ কী ভাবে কম্পিউটারে ঘটানো যায়, তা আমেরিকারও আগে করে দেখিয়েছে ভারত!

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ১৩:৪০
Share:

হাইড্রোজেন বোমার কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণে ভারত পথ দেখিয়েছিল গোটা বিশ্বকে! সবচেয়ে শক্তিশালী পরমাণু বোমা অর্থাৎ হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ কী ভাবে কম্পিউটারে ঘটানো যায়, তা আমেরিকারও আগে করে দেখিয়েছে ভারত! এমনই তথ্য উঠে এসেছে সমর বিশারদদের কথায়।

Advertisement

১৯৭৪ সালে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। থর মরুভূমির পোখরান টেস্ট রেঞ্জে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে‌ গোটা বিশ্বকে সে বছর জানানো হয়েছিল, ভারত পরমাণু শক্তিধর। প্রধানমন্ত্রী তখন ইন্দিরা গাঁধী। অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধ নামের সেই পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের পর থেকে ভারতের পরমাণু কর্মসূচি এবং গবেষণা দ্রুত এগোতে থাকে। ১৯৯৮ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বে দ্বিতীয় বার পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন শক্তি। সে বার আগের চেয়েও উন্নত হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ হয় পোখরানে। ১৯৯৮ সালের সেই বিস্ফোরের পর ভারত অনেক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। কিন্তু, ভারতের পরমাণু গবেষণা সকলের অলক্ষ্যে কোন শিখরে পৌঁছে গিয়েছে, তা দেখে অশ্চর্য হয়েছিল গোটা বিশ্ব।

আরও পড়ুন:
৬৭ বার মার্কিন পরমাণু বোমার আঘাত, ধুঁকছে মার্শাল আইল্যান্ডস

Advertisement

১৯৯৮ সালের ১১ মে হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয় পোখরানে। তাতে আমেরিকা, জাপান-সহ বিভিন্ন দেশ ভারতের উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করা সত্ত্বেও মাথা নোয়ায়নি ভারত। ১৩ মে আরও দু’টি ফিশন পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, আমেরিকা সে সময় ভারতের পরমাণু কর্মসূচির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছিল। সে সময়েই মার্কিন পরমাণু বিজ্ঞানীদের নজরে আসে, ভারত হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ কম্পিউটার সিমুলেটেড প্রক্রিয়াতেও ঘটাতে পারে।

এই কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণ কী?

এক সময় পরমাণু বোমা বা হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করে তার শক্তি বোঝার জন্য বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হত। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বোঝা হত, কতটা ধ্বংসলীলা চালাতে সক্ষম ওই বোমা, কতটা এলাকা জুড়ে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। কিন্তু বার বার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরমাণু বোমার শক্তি পরীক্ষা করা পরিবেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই কম্পিউটারে কাল্পনিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিখুঁত ভাবে বোমার শক্তি, বিস্ফোরণের অভিঘাত এবং ধ্বংসলীলার চেহারা বুঝে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেন বিজ্ঞানীরা। একেই বলা হয় কম্পিউটার সিমুলেটেড ফিউশন বম্ব (হাইড্রোজেন বোমা) টেস্ট।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ১৯৯৮ সাল বা তার আশেপাশেই কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণ ঘটানোর কৌশল রপ্ত করে ফেলেছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। আমেরিকা আগেই সেই চেষ্টা শুরু করেছিল। কিন্তু তখনও পুোরপুরি সাফল্য আসেনি। অন্য কোনও দেশ, বিশেষত ভারত তেমন কোনও গবেষণা নীরবে শেষ করে ফেলেছে, তা আমেরিকা ভাবতেই পারেনি। ২০০০ সালে মার্কিন বিজ্ঞানীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন, গবেষণাগারে বসে সফল ভাবেই কম্পিউটার সিমুলেটেড প্রক্রিয়ায় হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ভারত তার কিছু দিন আগেই অর্থাৎ ১৯৯৮ সাল নাগাদই তা করে ফেলেছিল। অন্য কোনও দেশের সাহায্য না নিয়ে পরমাণু কর্মসূচিতে কম্পিউটারের অসামান্য ব্যবহার ভারতীয় বিজ্ঞানীরা তখন যে ভাবে করেছিলেন, তা দেখেই মার্কিন বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হন।

চিন, ফ্রান্স, ব্রিটেন বা রাশিয়া কিন্তু কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণের কৌশল থেকে তখনও অনেক দূরে। আমেরিকা ওই কৌশল ভারতের পরে ওই কৌশল রপ্ত করলেও, পরবর্তীকালে ওই প্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নতি করতে তাদের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু অন্য পরমাণু শক্তিধর দেশগুলি এখনও কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণের কৌশলে ভারতকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি বলে সমর বিশারদদের দাবি। কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপক হারে চালু হওয়ার আগেই ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়ার মতো দেশ পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশ দেশই নাকি এখনও পর্যন্ত হাইড্রোজেন বোমার কম্পিউটার সিমুলেটেড বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন