সুন্দরবন বাঁচাতে হাত ধরুক ভারত-বাংলাদেশ

২০১০ সালে ইউপিএ জমানায় সুন্দরবন বাঁচাতে ভারত-বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন যৌথ ভাবে গবেষণায় নেমেছিল। আজ নয়াদিল্লিতে সেই গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করল ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কৈশোরের স্মৃতি টেনে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ সুগতবাবু।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোয় ডাক্তার বাবার হাত ধরে কিশোরটি চলে যেত বনগাঁ সীমান্তে। সেখানে সে দেখেছিল, বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে রাজনৈতিক সীমান্ত যেন মুছে গিয়েছে! সুন্দরবনের বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতেও রাজনৈতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারত-বাংলাদেশের এ বার হাতে হাত ধরে চলা উচিত বলে জানালেন সে-দিনের সেই কিশোর। আজকের সাংসদ সুগত বসু।

Advertisement

সুন্দরবন যে ক্রমে বিপন্ন হয়ে পড়ছে, পরিবেশবিদেরা দীর্ঘদিন ধরেই তা বলে আসছেন। তবে সেখানে এত দিন বাঘেদের নিয়েই যেন চিন্তা ছিল বেশি। এ বার বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে সওয়াল করলেন ভারত-বাংলাদেশের পরিবেশপ্রেমীরা। রাজনৈতিক সীমান্ত অতিক্রম করে দুই দেশকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে বলছেন তাঁরা।

২০১০ সালে ইউপিএ জমানায় সুন্দরবন বাঁচাতে ভারত-বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন যৌথ ভাবে গবেষণায় নেমেছিল। আজ নয়াদিল্লিতে সেই গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করল ‘অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কৈশোরের স্মৃতি টেনে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ সুগতবাবু।

Advertisement

পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, বিপন্নতা শুধু সুন্দরবনের মানুষের নয়, ঘাড়ের উপরে খাঁড়া ঝুলছে কলকাতা এবং ঢাকারও। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীন সংস্থা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের রিপোর্ট বলছে, জলবায়ু বদলের জেরে উপকূলবর্তী বিভিন্ন শহরে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ বাড়বে। সেই তালিকায় কলকাতা আর ঢাকা কিন্তু উপরের দিকেই রয়েছে। এই দু’টি শহরকে ঝড়ঝাপটা থেকে বাঁচায় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। ফলে সুন্দরবন বাঁচলে অর্থাৎ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক প্রাচীর ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচলে সুনিশ্চিত হবে কলকাতা আর ঢাকার ভবিষ্যৎও।

পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশে সুন্দরবন এলাকার জনসংখ্যা এক কোটি ৩০ লক্ষ। জলবায়ু বদল, সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা, শিক্ষা এবং জীবিকা নিশ্চিন্ত করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়া ম্যানগ্রোভ অরণ্য ফের গড়ে তোলা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষির উন্নতি, পানীয় জল সরবরাহ বাড়ানোর কথাও বলেছেন পরিবেশবিদেরা।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি আজকের অনুষ্ঠানে জানান, সে-দেশেও টেকসই উন্নয়ন (সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট) শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদেরা অবশ্য বলছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে কাজ করলে হবে না। পুরো বিষয়টিকে সামগ্রিক ভাবে দেখতে হবে। ঠিক যে-ভাবে রাইন অববাহিকা বাঁচাতে গাঁটছড়া বেঁধেছে ইউরোপের দেশগুলি।

এত দিন সুন্দরবনের বাসিন্দাদের কথা ভাবা হয়নি কেন? বিশ্বব্যাঙ্কের পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তাপস পালের কথায়, ‘‘আমরা এ-সব নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা বলছি। কিন্তু সেগুলো শুধু কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে। আশা করব, এ বার দুই দেশের সরকারই এই বিষয়ে সক্রিয় হবে।’’ এখন যেটুকু যা সক্রিয়তা রয়েছে, তার জন্য ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আয়লাকেই কৃতিত্ব দেন পরিবেশবিদেরা। তাঁরা বলছেন, আয়লার তাণ্ডবে সুন্দরবন তছনছ না-হলে এই মানুষগুলির কথা তো কেউ মাথাতেই আনত না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন