India-China Clash

শীতেও সেনা লাদাখে, ভাবছে দিল্লি

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, রেজিং লা ও রেচিং লা এলাকায় এখন কার্যত দু’শো মিটার তফাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’দেশের সেনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

লেহ-র বিমানঘাঁটিতে নামছে ভারতীয় সামরিক বিমান।—ছবি এএফপি।

লাদাখে ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা রয়েছে ঠিকই, তবে গত দু’দিনের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। ভারতীয় সেনা সূত্রে বলা হয়েছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে কোনও প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ করেনি চিনা সেনা। এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল মস্কোয় সাংহাই কর্পোরেশন সম্মেলনের ফাঁকে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। যে বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এশিয়া-সহ গোটা বিশ্ব।

Advertisement

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, রেজিং লা ও রেচিং লা এলাকায় এখন কার্যত দু’শো মিটার তফাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’দেশের সেনা। তবে পরিস্থিতি এমন নয় যে, এখনই যুদ্ধ বেধে যাবে। চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা ও সমরাস্ত্রের সংখ্যা বাড়ালেও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে না বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত। যদিও কোনও ঝুঁকি না-নিয়ে সতর্ক ভারত। এমনকি লাদাখে আসন্ন শীতেও সেনা মোতায়েন রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।

চিন সরকারের মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ আজ বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনার আগ্রাসী মনোভাব দেখে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় লাদাখে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে চিন। ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, গত দু’দিনে চিনের দিকে সাঁজোয়া গাড়ির আনাগোনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেনা সরিয়ে লাদাখে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা, কামান, প্যারাট্রুপ্যার ও ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন। বসানো হয়েছে এইচজে-১০ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল সিস্টেম। লাদাখের কঠিন পরিবেশে যুদ্ধে রপ্ত হওয়ার জন্য একাধিক বার মহড়া দিয়েছে সে দেশের বায়ুসেনা, স্থলসেনা ও প্যারাট্রুপ্যারেরা। গত কালই একাধিক এইচ-৬ বম্বার ও ওয়াই-২০ মালবাহী বিমানকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাদাখে উড়িয়ে আনা হয়েছে। ভারতের মতে, লাদাখে অন্তত এই মুহূর্তে চিনের ৫০ হাজার সেনা রয়েছে। যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৫০টি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ভূমি থেকে আকাশ ব্যালিস্টিক মিসাইল বসিয়েছে চিন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সংঘাতের আবহেই মস্কোয় আজ ভারত-চিনের বৈঠক

ভারতীয় উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে প্যাংগং হ্রদের উত্তরে রীতিমতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকাঠামোগত কাজ করে যাচ্ছে চিন। প্যাংগং হ্রদের গাঁ ঘেষে যে আটটি গিরিশিখর (ফিঙ্গার) রয়েছে, তার পাঁচ নম্বর ফিঙ্গারে ওই তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে জুন মাসে আলোচনার পরে ফিঙ্গার ফোর থেকে চিনা সেনা সরে যাওয়ার পরে সেখানে আর নতুন করে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে দেখা যায়নি চিনকে।

কিন্তু সেনার একটি সূত্র মনে করছে, ফিঙ্গার চার থেকে আট— যে বিতর্কিত এলাকায় এত দিন ভারতীয় সেনারাও টহল দিতে সক্ষম ছিল, সেখানে নিজেদের ঘাঁটি যথেষ্ট মজবুত করে ফেলেছে চিন। ফলে ওই এলাকা থেকে ভারতীয় গতিবিধির উপর সম্পূর্ণ ভাবে নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে। প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ প্রান্তেও ঠিক এ ভাবেই অবস্থান মজবুত করার কৌশল নিতে গিয়েছিল চিন। কিন্তু সেই মনোভাব আঁচ করে আগেভাগেই ২৯ অগস্ট চিনা সেনাদের হটিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গুরুত্বপূর্ণ গিরিশিখরগুলির দখল নেয় ভারত।

আরও পড়ুন: চিনকে ঠেকাতে ইরানের সঙ্গে বৈঠকের ঢল

আজ সেনা সূত্রে বলা হয়েছে, ২৯ অগস্ট সকালে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে আলোচনা করে রাতে হামলা চালানো হয়। একের পর এক ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে চিন সেনা। তাই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চিন যদি সেনা প্রত্যাহারের সুযোগে গিরিশিখর দখল হবে না এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে, শুধু তবেই সেনা কমানোর কথা ভাবা হবে।

তাই চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন গত কাল লাদাখের শীতের কথা বলে উত্তাপ কমানোর চেষ্টা করলেও, প্রয়োজনে শীতেও সেখানে সেনা মোতায়েন করার কথা ভাবছে ভারত। এক সেনাকর্তার কথায়, ‘‘শীতে চুসুলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪০-৪৫ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকে। গোটা এলাকা বরফের তলায় চলে যায়। এত দিন শীতে ওই এলাকায় কোনও পাহারা না-থাকলেও, এ বার চিনের মনোভাব দেখে সিয়াচেনের ধাঁচে সারা বছর লাদাখে সেনা মোতায়েন করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ সূত্রের মতে, ওই প্রচণ্ড শীতে রক্ষা পাওয়ার জন্য গরম কাপড়, তাঁবু ইত্যাদি কেনার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণও চলছে সেনাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন