Foreign Policy

চিনা ধাঁধা মাথায় রেখেই একুশে পা বিদেশনীতির

চিনের চ্যালেঞ্জ-সহ ঝড়ঝাপ্টার ২০২০ পেরিয়ে নতুন বছরে বিদেশনীতিতে ওই আপ্তবাক্যকেই আঁকড়ে ধরার কথা বলছে কূটনৈতিক শিবির।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০২
Share:

ছবি: রয়টার্স।

চিনের সঙ্গে ১৯৬২ সালের যুদ্ধের ঠিক পরের বছর এপ্রিলে ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লেখেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ‘পরিবর্তনের মুখে ভারত’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তাঁর বক্তব্য, ছিল, ‘আন্তর্জাতিক বাস্তব যখন বদলে যাচ্ছে, তখন আমাদেরও বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ককে আগুপিছু করতে হবে।’ একই সঙ্গে, চিনের নীতিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে বর্ণনা করে তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘দেশের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করায় আরও নজর দিতে হবে।’ তার জন্য আরও বেশি বিদেশি সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও সে দিন উল্লেখ করেছিলেন নেহরু। চিনের চ্যালেঞ্জ-সহ ঝড়ঝাপ্টার ২০২০ পেরিয়ে নতুন বছরে বিদেশনীতিতে ওই আপ্তবাক্যকেই আঁকড়ে ধরার কথা বলছে কূটনৈতিক শিবির। সেই সঙ্গে পাখির চোখ করছে জো বাইডেনের আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে। অগ্রাধিকার পাচ্ছে পড়শি মুলুকগুলির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতও।

Advertisement

সাতান্ন বছর আগে চিনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর যে অভিযোগ নেহরু এনেছিলেন, সদ্য সমাপ্ত বছরেও সাউথ ব্লক তার সাক্ষী। ভারত-চিন সীমান্তে অন্তত কুড়ি জন ভারতীয় সেনার প্রাণ গিয়েছে। মে থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করে রেখেছে লাল ফৌজ। দফায় দফায় সামরিক ও কূটনৈতিক বৈঠকের পরেও বিভ্রান্তি বাড়ছে বই কমছে না।

এই অবস্থায় কূটনীতিকদের মতে, নতুন বছরে বেজিংকে মোকাবিলার প্রশ্নে দিল্লির প্রয়োজন গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির সক্রিয় ও নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেনের সঙ্গে অক্ষ জোরদার করার কাজে তাই আগামী কয়েক মাসে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাবে বিদেশ মন্ত্রককে।

Advertisement

গত গ্রীষ্মে এই কাজ সাউথ ব্লক শুরু করেছিল। কিন্তু তা পুরোদমে করা যায়নি অতিমারির কারণে। একুশেও তার প্রাবল্য কবে কমবে, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু আশা, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা অনেকটা বাড়বে।

১ জানুয়ারি আগামী দু’বছরের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে ভারত। তাকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তান ও চিনের উপরে যে চাপ তৈরির কাজ করা হবে, ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত মিলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিযুক্ত ভারতীয় মিশন সূত্রে। ভারত প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের
দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি এখন বিদেশনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেই কারণে জলপথে চিনের একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হতে না-দেওয়া দিল্লির চ্যালেঞ্জ। তাতে ভারতের পাশে দাঁড়াচ্ছে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি। ফলে এ বছরের অনেকটা ব্যয় হবে জল-কূটনীতিকে চিনবিরোধী পোক্ত মঞ্চ তৈরিতে।

সাউথ ব্লকের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চকিত এবং ঘোষিত চিনবিরোধী অবস্থানে অনড় থাকবে না ডেমোক্র্যাটরা। তাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে পা রাখার পরে সম্পর্কের জল কোন দিকে গড়াচ্ছে, কোন খাতে বইছে চিনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক, সে সব দিকেও সতর্ক নজর রাখছে দিল্লি। ট্রাম্প জমানায় শত চেষ্টাতেও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। এ বার তা অবশ্যই অগ্রাধিকারের তালিকায়।

‘প্রতিবেশীই প্রথম’— এই ছিল নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত নীতি। কিন্তু গত এক বছরে বাংলাদেশ, নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর থাকেনি। সিএএ-এনআরসি প্রসঙ্গে যে ভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে বার বার বাংলাদেশের নাম উঠেছে, তাতে ক্ষুব্ধ হাসিনা সরকার। অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারতীয় মন্ত্রীর বক্তব্যেও বাংলাদেশে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। গত বছরের শেষে বাংলাদেশের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নেপালের মানচিত্রে ভারতের তিনটি ভূখন্ডের অন্তর্ভুক্তি আটকানো যায়নি। এখন চেষ্টা চলছে তাদের রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে নেপালি কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে কাছে টানার। সব মিলিয়ে, নতুন বছর মোদীর কাছে প্রতিবেশীকে কাছে টানার পরীক্ষাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন