National News

তিন দশকেই ভারত হবে গণ-অপুষ্টির ‘রাজধানী’, বলছে গবেষণা

আমাদের শরীরের বেড়ে ও গড়ে ওঠার জন্য যে যে প্রোটিন আর ধাতুগুলি আমরা গাছপালা থেকে নিই, পাই চাল, গম আর ভুট্টা থেকে, দূষণের জন্য বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সেই প্রোটিন আর ধাতুগুলির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। ফলে, ওই সব খাদ্যশস্যের পুষ্টিগুণ কমবে উদ্বেগজনক ভাবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ১৬:৪০
Share:

ছবি- শাটার স্টক।

বায়ুদূষণের ফলে বাতাসে বিষের পরিমাণ যে ভাবে উত্তরোত্তর বাড়ছে, তাতে আর তিন দশকে গণ-অপুষ্টি (মাস ম্যালনিউট্রিশান) কার্যত, গ্রাস করবে গোটা বিশ্বকে। ভারতেই তার প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। জিঙ্কের অভাবে এ দেশে অপুষ্টির শিকার হবেন আরও ৫ কোটি মানুষ। আর ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ ভারতে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হবেন প্রোটিনের অভাবে। বড় প্রভাব পড়বে চিন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ব্রাজিল ও কেনিয়াতেও।

Advertisement

আমাদের শরীরের বেড়ে ও গড়ে ওঠার জন্য যে যে প্রোটিন আর ধাতুগুলি আমরা গাছপালা থেকে নিই, পাই চাল, গম আর ভুট্টা থেকে, দূষণের জন্য বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সেই প্রোটিন আর ধাতুগুলির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। ফলে, ওই সব খাদ্যশস্যের পুষ্টিগুণ কমবে উদ্বেগজনক ভাবে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএইচ চান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের হালের একটি গবেষণা এ কথা জানিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-ক্লাইমেট চেঞ্জ’-এ।

Advertisement

ওই গবেষণা বলছে, শিল্পদূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে যে ভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড)-এর পরিমাণ বাড়ছে, সেই হার বজায় থাকলে, ২০৫০ সালে চাল-গম-ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যগুলিতে শরীরের বাড়বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোটিন আর লোহা ও জিঙ্কের মতো ধাতুগুলির পরিমাণ অন্তত ১৭ শতাংশ কমবে।

এর ফলে, বিশেষ করে ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে প্রোটিন, লোহা ও জিঙ্কের অভাবজনিত অপুষ্টির শিকার হবেন আরও কয়েক কোটি মানুষ, বলছেন মূল গবেষক ম্যাথু স্মিথ।

আরও পড়ুন- বাতাসে বিষ! গড়ে দেড় বছর কমাচ্ছে ভারতীয়দের আয়ু, বলছে গবেষণা​

আরও পড়ুন- এশিয়ান গেমসের আকাশে বায়ু দূষণের কালো মেঘ​

শরীরে জিঙ্ক ধাতুর অভাব হলে তার বড় প্রভাব পড়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর। শিশুরাই তার শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। ম্যালেরিয়া, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায় শিশুদের।

লোহা বা লোহাঘটিত যৌগের অভাব ঘটলে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় প্রসূতি-মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। তা শিশুদের আইকিউ কমিয়ে দেয়। কমায় লৌহ রক্তকণিকার সংখ্যা। অ্যানিমিয়া বা রক্তাপ্লতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

গবেষণা বলছে, শরীরের বাড়বৃদ্ধির জন্য রোজ আমাদের যে পরিমাণ প্রোটিন, লোহা আর জিঙ্ক লাগে, তার ৪০ শতাংশই আসে চাল, গম ও ভুট্টা থেকে। মানুষের শরীরে প্রোটিনের যা চাহিদা, তার ৫ ভাগের ৩ ভাগ, লোহার চাহিদার ৫ ভাগের ৪ ভাগ আর জিঙ্কের প্রয়োজনের ৭০ শতাংশই মেটায় নানা ধরনের গাছপালা। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ যে ভাবে উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে, তাতে ওই সব খাদ্যশস্য ও গাছপালায় প্রোটিন ও দু’টি ধাতুর পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী উষ্ণায়ন, দীর্ঘমেয়াদি খরা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়া।

মানুষ যে সব গাছপালা নিয়মিত খায়, ১৫১টি দেশের তেমন ২২৫টি প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে তাদের প্রোটিন, লোহা আর জিঙ্কের পরিমাণ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণা বলছে, জিঙ্কের অভাবে অপুষ্টির শিকার হবেন বিশ্বের আরও সাড়ে ১৭ কোটি মানুষ। যা জনসংখ্যার ২ শতাংশ। আর প্রোটিনের অভাবে অপুষ্টির শিকার হবেন আরও ১২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ। শরীরে লোহার পরিমাণ ৪ শতাংশেরও বেশি কমে যাবে অন্তত ১৪০ কোটি মহিলা ও শিশুর। তার ফলে, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবেন আরও ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন