রায় নিয়ে আপাতত চুপ! চিন সাগরের জল মাপছে ভারত

সাগর দখলের যুদ্ধে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গেল বেজিং। আর এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে ফায়দা তোলার এক সুযোগও এসে গেল ভারতের সামনে। আজ দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা সংক্রান্ত বিতর্কের রায় দিল হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ১৯:২৬
Share:

সাগর দখলের যুদ্ধে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়ে গেল বেজিং। আর এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে কূটনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে ফায়দা তোলার এক সুযোগও এসে গেল ভারতের সামনে। আজ দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা সংক্রান্ত বিতর্কের রায় দিল হেগ-এর আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল। রায় সম্পূর্ণভাবে চিনের বিপক্ষে। ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, চিন সাগরের জলসীমা এবং তার সম্পদের উপর চিন যে ঐতিহাসিক দাবি জানিয়ে এসেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর কোনও আইনি ভিত্তি নেই।

Advertisement

ভারত অবশ্যই ঝাঁপ দিয়ে পড়ে এখনই কোনও পক্ষ নিতে চাইছে না। বিদেশমন্ত্রকের এক কর্তার মতে, সেটা হবে অত্যন্ত মূর্খামির কাজ। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে শুধু জানানো হয়েছে, ট্রাইবুনালের রায় পড়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঘরোয়া ভাবে সাউথ ব্লকের কর্তারা জানাচ্ছেন, যেহেতু পরমাণু সরবারহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চিনের হাতে ঝুলছে, এই সময় চিনের কোণঠাসা হওয়ার মত ঘটনা ভারতের জন্য সুবিধাজনক। এর ফলে নয়াদিল্লির উপর নির্ভরশীলতা কিছুটা হলেও তৈরি হবে চিনের। তাই এখনই এ ব্যাপারে চিনকে সমর্থন করা হবে, না বিরোধিতা করা হবে তা ঝুলিয়ে রেখে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখার কথাই ভাবা হচ্ছে।

ট্রাইবুনালের রায় যে এমনটাই হবে এই আশঙ্কা আগে থেকেই করছিল বেজিং। এবং সে কারণেই ভারতের কাছে বার্তা পাঠিয়ে পাশে থাকার আবেদনও করা হয়েছিল বেজিং-এর পক্ষ থেকে। তবে আজকের রায় যে তারা আদৌ মেনে নিচ্ছে না, তা জানিয়ে দিয়েছে চিন। চিনা বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এই রায় মানার প্রশ্নে তাদের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আরও এক ধাপ চড়িয়ে সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, চিনের রণতরী দক্ষিণ চিন সাগরে দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষা করবে। সমস্ত রকমের হুমকি এবং আক্রমণের মোকাবিলাও করা হবে।

Advertisement

যে দেশের করা মামলাতে বিষয়টি রাষ্ট্রপুঞ্জের এই ট্রাইবুনালে ওঠে সেই ফিলিপিন্স-এর বিদেশ সচিব পেরফেক্টো ইয়াসে আজকের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত মাইলফলক হয়ে থাকবে। দক্ষিণ চিন সাগর কেন্দ্রিক বিতর্কের অবসানের এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অবশ্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিতর্ক অবসান দূরস্থান, অশান্তি আরও বাড়বে বই কমবে না। সব মিলিয়ে আবার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে এমন এক সমুদ্রপথে যেখানে বছরে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হযে থাকে। চিন গত তিন বছর ধরে দাবি করতে শুরু করেছে, দক্ষিণ চিন সাগরের সিংহভাগই তাদের নিজস্ব জলসীমা। দখলদারি সুনিশ্চিত করতে দক্ষিণ চিন সাগরের বিভিন্ন অংশে চিন কৃত্রিম দ্বীপও বানিয়েছে। কিন্তু আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ চিনের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব। দক্ষিণ চিন সাগর এত দিন ধরে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবেই স্বীকৃত। সেই অঞ্চলকে আচমকা চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করলেই যে তা মেনে নেওয়া হবে না, সে বার্তা চিনকে দিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তা নিয়ে মার্কিন-চিন হুঁশিয়ারি-পাল্টা হুঁশিয়ারি সমানেই চলছে। ফলে আজকের এই রায় শুধু ফিলিপিন্স-এরই নয়, চিনের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের জয় বলেও দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

চিনের বিপক্ষে রায় দিল আন্তর্জাতিক আদালত, মানছি না, বলল বেজিং

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement