অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করে চিন। সেই প্রচেষ্টার নিন্দা করল ভারত। —ফাইল চিত্র।
ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতির আবহে অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে চিন। আর এ বার ভারতের এই রাজ্যের উপর চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার নিন্দা করল নয়াদিল্লি। বেজিঙের অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশের নাম পরিবর্তনের চেষ্টার আরও এক বার তীব্র প্রতিবাদ জানাল ভারত। চিনকে মনে করিয়ে দিল, অরুণাচল প্রদেশ ভারতেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ!
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক চিনের প্রচেষ্টাকে ‘অকার্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘‘আমরা লক্ষ করছি, চিন ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নামকরণের জন্য নিরর্থক এবং অযৌক্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চিনের প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। নামকরণ করলেই তা অনস্বীকার্য বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। অরুণাচল ভারতেরই অংশ ছিল, আছে এবং সর্বদাই থাকবে।’’
অরুণাচল তাদের অংশ বলে বহু দিন ধরেই দাবি করে আসছে চিন। ভারত এবং চিনের মধ্যে সংঘাতের অন্যতম কারণই হল অরুণাচল। চিন প্রায়শই উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্থানের নাম পরিবর্তন করে মানচিত্র প্রকাশ করে থাকে। গত বছরই চিন অরুণাচলের ৩০টি জায়গার নতুন নামের তালিকা প্রকাশ্যে এনেছিল। যদিও চিনের এই প্রচেষ্টা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।
অরুণাচলের ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এবং চিনের সীমান্ত- বিবাদের অন্যতম কারণই অরুণাচলের উপর বেজিঙের দাবি। ভারতের এই রাজ্যটি চিনের তিব্বতের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে। বেজিং বরাবর দাবি করে, অরুণাচল ঐতিহাসিক ভাবে তিব্বতেরই অংশ। যদিও ভারত সেই দাবির বিরোধিতা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অরুণাচল নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধের পাশাপাশি এই রাজ্যের জলসম্পদ ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চিন-অরুণাচল সীমান্তে আমাকো ক্যাম্পের কাছে দইমরু নালার উপর কাঠের অস্থায়ী ব্রিজ বানিয়েছিল চিন। অভিযোগ, ২০২০ সালে দিবং জেলাতেও ঢুকে পড়েছিল চিনা বাহিনী। সীমান্ত-সহ নানা বিষয় নিয়ে ভারত-চিনের বিরোধ বহু দিনের। ২০২০ সালের পর থেকে বিরোধ চরমে ওঠে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গলওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা প্রতিরোধে বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হন। গলওয়ানকাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য বৈঠক শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডা স্তরের বৈঠকের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কিছু এলাকা থেকে সেনা সরানো হয়েছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সমাপ্ত হয় সেই প্রক্রিয়া।
ভারত এবং চিন দু’পক্ষই লাদাখে সীমান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছোনোর পরেও গত বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে লাদাখের কিছু অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে চিন। বিদেশ মন্ত্রক তার প্রতিবাদ জানিয়ে স্পষ্ট করে দেয়, বেআইনি দখলদারি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যদিও ২০২৫ সালে দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি হয়। সীমান্তের উত্তেজনা কমানো এবং সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার পরই সেই উন্নতি দেখা দেয়। তবে অরুণাচল আবার সেই সম্পর্কে ‘কাঁটা’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে সামরিক অস্থিরতার মধ্যে চিনের অবস্থান ছিল আলোচ্য বিষয়। বেজিং প্রথম থেকেই পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। তবে তারা এ-ও জানায়, পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তারাও। যদিও সীমান্তে পেশি প্রদর্শনের পরিবর্তে সংযম দেখানোর জন্য নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল বেজিং। একই সঙ্গে পকিস্তানের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছে তারা। তার দাবি, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষায় তাদের পাশে আছে চিন। তারা এ-ও দাবি করে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে পাকিস্তান। সেই আবহে চিনকে অরুণাচল নিয়ে ভারতের বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।