National News

ছ’মাস পরিচারিকা সেজে খুনের কিনারা! ‘দেশি শার্লক’ রজনীর ঝুলিতে ৮০ হাজার সমাধান

পুলিশ-গোয়েন্দা যা পারেননি, রোমহর্ষক সেই খুনের ঘটনার কিনারা করেন ওই পরিচারিকা। পরিচারিকার ছদ্মবেশ ধরে ছ’মাস কাজ করেছিলেন ওই বাড়িতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:৩০
Share:

‘দেশি শার্লক’ রজনী পণ্ডিত। ছবি: ‘হিউম্যানস অব বম্বে’-র ফেসবুক পেজ থেকে

খুন হয়েছেন বাবা-ছেলে। বেঁচে আছেন একমাত্র গৃহকর্ত্রী। খুনের কোনও সূত্রই পেল না পুলিশ। কিছুদিন পর কাজে যোগ দিলেন এক সর্বক্ষণের পরিচারিকা। দুই মহিলা মিলে ভালই চলছিল। আচমকাই একদিন নিঃশব্দ ঘরে পরিচারিকার শরীরে লুকনো ক্যাসেট রেকর্ডারের শব্দ। তারপর...

Advertisement

পুলিশ-গোয়েন্দা যা পারেননি, রোমহর্ষক সেই খুনের ঘটনার কিনারা করেন ওই পরিচারিকা। পরিচারিকার ছদ্মবেশ ধরে ছ’মাস কাজ করেছিলেন ওই বাড়িতে। ওই শব্দ বুঝতে পেরেই গৃহকর্ত্রী তাঁকে ঘরবন্দি করে দেন। একদিন কোনওক্রমে ছুরি দিয়ে দড়ি কেটে বাইরে বেরিয়ে সেই খুনের কিনারা করেন। ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করিয়েছিলেন ওই মহিলাই।

এই পরিচারিকা আসলে দেশের প্রথম মহিলা প্রাইভেট গোয়েন্দা। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রজনী পণ্ডিত। যিনি নিজেকে ‘দেশি শার্লক’বলতেই বেশি পছন্দ করেন। সম্প্রতি ফেসবুকের একটি পেজ-এ নিজের জীবন কাহিনী শেয়ার করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা ঝড় তুলেছে।

Advertisement

ছোট-বড় মিলিয়ে সমাধান করেছেন প্রায় ৮০ হাজার কেস। ২২ বছর বয়সেই কলেজ পড়ুয়া রজনী সমাধান করেছিলেন এক চুরির রহস্যের। তিনি লিখেছেন, স্নাতকস্তরে পড়ার সময় একটি সংস্থায় পার্ট টাইম করণিকের কাজ করতেন। সেখানে তাঁর এক সহকর্মীর বাড়িতে হামেশাই চুরি হত। তাঁর সন্দেহ ছিল নতুন পুত্রবধূর উপর। কিন্তু প্রমাণ পাচ্ছিলেন না।

আরও পডু়ন: দেশের প্রথম মহিলা গোয়েন্দা সম্বন্ধে এই তথ্যগুলি জানেন?

রজনীর বাবা ছিলেন সিআইডি অফিসার। তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা, সেগুলি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করার প্রাথমিক পাঠ বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই জীবনে প্রথম সহকর্মীর সেই চুরির কেস হাতে নেন। অল্প দিনের মধ্যেই ধরে ফেলেন, পুত্রবধূ নন, আসল চোর তাঁর সেই সহকর্মীর ছেলেই। পরে চুরির কথা স্বীকারও করে সে।

রজনী লিখেছেন, তাঁর বাবা সিআইডি অফিসার। অথচ নিজের মেয়ে যে গোয়েন্দাগিরি করছেন, সেটা তিনি জানতেন না। তবে একদিন আঁচ করেই সম্ভাব্য বিপদের বিষয়ে বুঝিয়েছিলেন। রজনীর উত্তর ছিল, বাবা যদি পারেন, তাহলে তিনি কেন পারবেন না। সেই থেকে বাবাও আর বিশেষ কিছু বলেননি। ‘‘সেই থেকে গোয়েন্দাগিরিকেই বিয়ে করে নিই। সংসার পাতার কথা ভাবার সময়ই পাইনি।’’ —লিখেছেন রজনী।

আরও পড়ুন: ‘মৃত্যুকে আর ভয় লাগছে না মা’, মাও হামলার মুখে মর্মস্পর্শী ভিডিয়ো বার্তা

ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল ফোন বর্জিত সময়েও সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মহিলার ‘লেডি শার্লক হোমস’ হয়ে ওঠার এই বাস্তব গল্প ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামে একটি ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন রজনী।

পোস্ট হওয়ার পর থেকেই লেডি শার্লক হোমসের এই জীবন-কাহিনী ভাইরাল। ১১ হাজারের বেশি মানুষ রিঅ্যাক্ট করেছেন। শেয়ার হয়েছে সাড়ে তেরো হাজারেরও বেশি। কমেন্ট পড়েছে প্রায় ৭০০। কেউ লিখেছেন, ‘এখন থেকে ইনিই আমার আদর্শ’। অন্য একজন আবার বলিউডের প্রতি আবেদন রেখেছেন রজনীর বায়োপিক তৈরি হোক।

আরও পড়ুন: ‘শুধু ইমতিয়াজকে কেন? আমাদেরও খুন করে যাও’ জঙ্গিদের উদ্দেশে পোস্ট

ফেলুদা, ব্যোমকেশ, শার্লক হোমস, কিংবা মিস মার্পেলরা হয়তো আরও অনেক জটিল, ভয়ঙ্কর রহস্যের সমাধান করেছেন। কিন্তু সে সবই সাহিত্যের পাতায়। কল্পনার জগতে। বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু রজনী পণ্ডিত সেখানে রক্ত মাংসের মানুষ। কঠোর বাস্তব। কাগুজে গোয়েন্দা নন। কাগুজে গোয়েন্দারাই যেন বাস্তবের রজনী। যাঁর জীবন দর্শন, ‘‘গোয়েন্দা তৈরি করা যায় না, গোয়েন্দার জন্ম হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন