Operation Sindoor

নিহত জঙ্গিদের কফিনে পাক পতাকা, বীর-মর্যাদায় শেষকৃত্য! পাকিস্তানের ‘জঙ্গি-যোগ’ সারা বিশ্বের সামনে নিয়ে এল ভারত

বিশ্বের বেশির ভাগ জায়গায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাক-যোগের কথা স্মরণ করিয়ে ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী আমেরিকাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, লাদেনকে একদা আশ্রয় দিয়েছিল এই পাকিস্তানই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

(উপরে বাঁ দিক থেকে) বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ, বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী, কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। (নীচে) ভারতের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের কফিনে জড়ানো হয়েছে পাকিস্তানের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত।

‘অপারেশন সিঁদুরে’ নিহত জঙ্গিদের কফিনে পাকিস্তানি জাতীয় পতাকা জড়ানো। ‘রাষ্ট্রীয় মর্যাদা’য় তাদের শেষকৃত্য হয়েছে। এ ভাবেই বৃহস্পতিবার আরও এক বার পাকিস্তানের জঙ্গি-যোগের কথা প্রকাশ্যে তুলে ধরলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পাকিস্তানে জঙ্গিদের শেষকৃত্য হয়তো এ ভাবেই হয়!’’ বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠকে বিক্রম মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই পাকিস্তানেরই অ্যাবোটাবাদে লুকিয়ে ছিল আল-কায়দার প্রাক্তন প্রধান ওসামা বিন লাদেন।’’ যেখানে তাকে নিকেশ করে আমেরিকা। বিশ্বের বেশির ভাগ জায়গায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাক-যোগের কথা স্মরণ করিয়ে বিক্রম আমেরিকাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, লাদেনকে একদা আশ্রয় দিয়েছিল এই পাকিস্তানই।

Advertisement

৭ মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। পাকিস্তান দাবি করেছে, ওই হানায় তাদের দেশের সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয় বিদেশসচিব। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বেছে বেছে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। প্রতিবেশী দেশের সেনাঘাঁটিকে কোনও ভাবেই লক্ষ্য করা হয়নি। এর পরেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি সাধারণ নাগরিক নিহত হতেন, তা হলে কি তাঁদের কফিনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা জড়িয়ে এ ভাবে শেষকৃত্য করা হত? তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার শেষকৃত্য হয়েছে সেখানে জঙ্গিদের। সমাজমাধ্যমে আপনারা দেখেছেন। যদি সাধারণ নাগরিক নিহত হতেন, তা হলে কি এই ছবি দেখা যেত? জঙ্গিদের দেহ পাকিস্তানি পতাকায় মুড়ে নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হয়েছে। হয়তো জঙ্গিদের শেষকৃত্য এ ভাবেই হয় পাকিস্তানে।’’

পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের ধর্মীয় স্থলেও হামলা চালিয়েছে ভারত। সেই দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রম। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তান আসলে ধর্মীয় স্থানকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। সেখানে জঙ্গিদের মগজধোলাই করা হয়। পুঞ্চে ওরাই গুরুদ্বার লক্ষ্য করে হামলা করেছে।’’ বিদেশসচিব বলেন, ‘‘পাকিস্তান আসলে এই অভিযান নিয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে।’’ ‘সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যোগ ছিন্ন’ করতে চাইছে। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেছেন, সেখানে জঙ্গি নেই। প্রমাণ রয়েছে ওদের বিরুদ্ধে। সারা দুনিয়ার অনেক সরকারি সংস্থার কাছে ওদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। লাদেন কোথায় ছিল, কে তাকে শহিদ বলেছে, সব প্রমাণ রয়েছে।’’ মনে করা হচ্ছে, এ ভাবে আসলে বিক্রম আমেরিকার কাছে পাকিস্তানের অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করে তুলতে চাইছেন।

Advertisement

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তাতে তিনি মধ্যস্থতা করতে চান। কারণ, দু’দেশের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ভাল। এই আবহে ট্রাম্পকেই কি ভারত মনে করাতে চাইছে যে, অতীতে পাকিস্তানেই লুকিয়ে ছিলেন লাদেন, সেখানেই নিকেশ করা হয় তাঁকে?

ভারতের বিদেশসচিব এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট) দু’বার পহেলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করার পরেও তার বিরোধিতা করেছে পাকিস্তান। তিনি জানান, ২২ এপ্রিল হামলার পরেই দায় স্বীকার করেছিল টিআরএফ। এর পরে ২৩ এপ্রিল আবার তারা দায় স্বীকার করে। যদিও পাকিস্তান বার বার তা ‘অপোজ়’ করে গিয়েছে। এই টিআরএফের নেপথ্যে যে জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-এ-ত্যায়বার মদত রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিদেশসচিব। তিনি এ-ও জানান যে, এই লশকর এবং জইশ-এ-মহম্মদের সঙ্গে পাকিস্তানের কি সম্পর্ক, তা এখান থেকেই স্পষ্ট। পহেলগাঁও হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আসলে সেই তদন্তেই বাধা দিতে চাইছে পাকিস্তান, যেমনটা ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার ক্ষেত্রে করেছিল তারা। বিক্রম জানিয়েছেন, মুম্বই হামলায় ধরা পড়েছিল জঙ্গি অজমল কসাব। ওই হামলায় পাক সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী লশকরের মদতের প্রমাণও মিলেছিল। সেই নিয়ে পাকিস্তানের হাতে ফরেন্সিক প্রমাণ তুলে দিলেও লাভ হয়নি।

বৃহস্পতিবার বিক্রমের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। সাংবাদিক বৈঠকে বিক্রম বার বার জানিয়েছেন যে, শুরুটা পাকিস্তানই করেছে। ভারত ৭ মে শুধু প্রত্যাঘাত করেছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সূচনা করেছিল পাকিস্তান। তারই জবাবে প্রতিবেশী দেশে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘নিয়ন্ত্রিত’ অভিযান চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তানে কোনও সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়নি। উইং কমান্ডার ব্যোমিকাও বলেন, ‘‘পাকিস্তানি সেনাঘাঁটি নিশানা করা হয়নি। ভারতে সেনাঘাঁটিকে নিশানা করা হলে উচিত জবাব দেওয়া হবে।’’ কর্নেল সোফিয়াও জানান যে, নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চালাচ্ছে পাকিস্তান। কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি, রাজৌরি, পুঞ্চে লাগাতার তোপ দাগছে তারা। মর্টার ছুড়ছে। তার জেরে ১৬ জন মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিন জন মহিলা, পাঁচ শিশু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement