বিচারপতি সুদীপরঞ্জন সেন। ছবি: মেঘালয় হাইকোর্টের ওয়েবসাইট থেকে।
বিতর্কিত মন্তব্য মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতির। তার জেরে চরম অসন্তোষ দেশের রাজনৈতিক মহলে।
বুধবার মেঘালয় হাইকোর্টে এক ব্যক্তির নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি চলছিল। তার প্রেক্ষিতে ৩০ পাতার একটি নির্দেশ দেন বিচারপতি সুদীপরঞ্জন সেন। তাতে দেশভাগের সময় ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষিত করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। চাইলে মোদী সরকার তা করে দেখাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।
দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় মেঘালয়ে বসবাসের নিয়মকানুন কিছুটা আলাদা। চাইলেই বাইরে থেকে গিয়ে কেউ সেখানে বাস করতে পারেন না। স্থায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হয়। সম্প্রতি এক জওয়ানের নাগরিকত্বের আবেদন খারিজ করে রাজ্য প্রশাসন। বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। বুধবার সেই আবেদনের শুনানি ছিল।
আরও পড়ুন: তারিখ পিছলেও রথযাত্রা হবেই, লালবাজারে বৈঠক শেষে বললেন দিলীপ ঘোষ
এর পর ৩০ পাতার নির্দেশে বিচারপতি সেন বলেন, “ধর্মের নিরিখে দেশভাগ হয়েছিল। নিজেদের ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। ভারতেরও উচিত ছিল নিজেদের হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা। তা না করে ধর্মনিরপেক্ষ থেকেছে। আমার মনে হয় ভারতকে আর একটি ইসলামি দেশে পরিণত না করা উচিত। নইলে দেশের পক্ষে তো বটেই, গোটা বিশ্বের পক্ষে তা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। আমার বিশ্বাস, একমাত্র নরেন্দ্র মোদীর সরকারই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝবে এবং সেই মতো পদক্ষেপ করবে।”
পড়শি দেশগুলিতে হেনস্থার শিকার অ-মুসলিম মানুষদের কোনওরকম কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে বসবাসের অনুমতি দিতেও কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিদেশে যাঁরা থাকেন, সেই সকল হিন্দু, শিখ এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের যখন খুশি ভারতে ফেরার অনুমতি দিতে বলেছেন। এমনকি জন্মের পর তারা যাতে ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যায়, তার সুপারিশ করেন তিনি। ওই নির্দেশপত্রের একটি করে কপি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং মেঘালয়ের রাজ্যপালের হাতে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একটি প্রতিলিপি পৌঁছে দিতে বলেন সহকারী সলিসিটর জেনারেলকে।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর সভা বাতিল, কবে আসতে পারেন মোদী? অন্ধকারে বিজেপি
বিষয়টি সামনে আসার পরই সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাঁর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন মজলিসি ইত্তেহাদ উল মুসলিমিন প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, “মেঘালয় হাইকোর্টের রায়ের তীব্র সমালোচনা করছি। ভারত কখনও ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত হবে না।” এনসিপি নেতা মজিদ মেমন বলেন, “কোন শর্তে দেশভাগ হয়েছিল তা জানা উচিত ছিল ওই বিচারপতির। কিন্তু উনি বোধহয় ইতিহাস পড়েননি। সেইসময় মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলি পাকিস্তানের অধীনে চলে যায়। তা সত্ত্বেও কোটি কোটি মুসলিম কিন্তু এ দেশেই থেকে গিয়েছিলেন। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতেই আস্থা ছিল তাঁদের। ধর্ম নিরপেক্ষ সংবিধান মেনেই দেশ চলার কথা ছিল।”
তবে মেঘালয় হাইকোর্টের বিচারপতির পক্ষ নিতে দেখা যায় বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহকে। তিনি বলেন, “বিচারপতি সেনের সঙ্গে একমত আমি। সাংবিধানিক পদে থেকেও যে উনি এমন মন্তব্য করেছেন। যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-ভাবনারই প্রতিফলন। ওঁকে ধন্যবাদ জানাই।” একই সুর ধরা পড়েছে শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের গলায়। তাঁর দাবি, “আমরা তো প্রথম থেকেই ভারত হিন্দুরাষ্ট্র বলে দাবি করে এসেছি। দেশভাগই তো হয়েছিল ধর্মের নিরিখে।”