রাষ্ট্রপুঞ্জে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাকিস্তানকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র’ বলে তোপ দেগেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তবে সরাসরি তার জবাব দিতে গিয়ে বিপত্তি বাড়ল পাকিস্তানের। এই সুযোগে ইসলামাবাদকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি নয়াদিল্লিও। ভারতের খোঁচা, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যোগসাজশের কথা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তান।
শনিবার জয়শঙ্করের বক্তৃতার পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় জবাব দেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিনিধি দাবি করেন, ভারত বার বার মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই ভাবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে পাকিস্তান। পাকিস্তানের জবাবি বক্তব্যের পরেই পাল্টা মুখ খোলে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে নয়াদিল্লি জানায়, জয়শঙ্কর এক পড়শি দেশের কথা বলেছেন মাত্র। কিন্তু নাম করেননি। তার পরেও পাকিস্তান যে ভাবে জয়শঙ্করের মন্তব্যের ‘জবাব’ দিতে তৎপর হয়েছে, তা থেকেই সন্ত্রাসবাদে তাদের ভূমিকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে কটাক্ষ করেছে নয়াদিল্লি।
জয়শঙ্কর তাঁর বক্তৃতায় দেশকে ‘ভারত’ বলে উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের নাম না-করেই তিনি বলেন, “এক প্রতিবেশী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্র। কয়েক দশক ধরে বড় বড় জঙ্গি হামলার মূল উৎস খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি দেশেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকা সেই দেশের নাগরিকের নামে ভর্তি।” পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলাকে ‘সীমান্তপারের বর্বরতা’ বলে অভিহিত করেন তিনি।” কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, সম্ভবত কৌশলগত কারণেই পাকিস্তানের নাম না-করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। কিন্তু তাঁর বার্তা থেকেই স্পষ্ট যে, নয়াদিল্লির নিশানায় ছিল ইসলামাবাদই। ওই কূটনীতিকদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা অনেকটা ‘ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি’ প্রবাদটির মতোই। ভারত নাম না-করলেও পাকিস্তান যে ভাবে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে তৎপর হয়েছে, তাতে আখেরে ভারতেরই কূটনৈতিক জয় হয়েছে বলে মনে করছেন ওই কূটনীতিকরা।
শনিবার পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিদলের ‘সেকেন্ড সেক্রেটারি’ রেন্তালা শ্রীনিবাস বলেন, “সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের হাতের ছাপ সর্বত্র রয়েছে। এটা শুধু ওই দেশের শত্রুদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক।” তার পরেই পাকিস্তানকে ‘টেরোরিস্তান’ বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কোনও যুক্তি আর অসত্য ভাষণই ওদের অপরাধকে মুছে দিতে পারবে না।” ভারতের প্রতিনিধির এই মন্তব্যের পরেই জবাব দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ান রাষ্ট্রপুঞ্জের পাক প্রতিনিধি। তিনি বক্তৃতা শুরু করার আগেই কক্ষত্যাগ করেন ভারতের প্রতিনিধি শ্রীনিবাস।