প্রিডেটর ড্রোন। ছবি: সংগৃহীত।
মাটিতে ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’-এর সঙ্গে আকাশে সশস্ত্র ড্রোন। এই দুইয়ের মিশেলেই চিনের চোখরাঙানিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছে নয়াদিল্লি।
ডোকলামে চিনের সঙ্গে সংঘাত আপাতত মিটেছে। কিন্তু ডোকলামের মতো পরিস্থিতি ফের তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়ত। তার জন্য চিন সীমান্তে ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’-এর পাশাপাশি আকাশে সশস্ত্র ড্রোন তথা চালকহীন হানাদার বিমানও নিয়োগ করতে চাইছেন সেনা ও বায়ুসেনা কর্তারা। যাতে সীমান্তে চিনা সেনার গতিবিধির উপরে নজর রাখা যায়।
এক সপ্তাহ আগেই সেনা ও বায়ুসেনার কম্যান্ডারদের সম্মেলন হয়েছে। দু’টিতেই হাজির ছিলেন নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সূত্রের খবর, ওই দু’টি সম্মেলনেই সামরিক বাহিনীর জন্য আরও ড্রোন কেনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামরিক কর্তারা বলেছেন, চিন সীমান্তে নিয়োগের জন্য শুধু ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’ গড়ে তুললেই হবে না। সীমান্তের ও-পারে চিনা গতিবিধি জানার জন্য ড্রোনও জরুরি।
আরও পড়ুন:কাশ্মীরে কথা চালাতে দূত কেন্দ্রের
রবিবারই ভারতীয় বায়ুসেনাকে সশস্ত্র ড্রোন ‘প্রিডেটর অ্যাভেঞ্জার’ বিক্রির সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে হোয়াইট হাউস। ক্যামেরা বা অন্য সরঞ্জাম লাগানো নজরদারির ড্রোন থাকলেও ভারতের হাতে এখনও সশস্ত্র ড্রোন নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে আশঙ্কায় বারাক ওবামার জমানায় আমেরিকা ভারতকে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করতে রাজি হয়নি। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় সেই বাধা না থাকায় ভারতের বায়ুসেনা তাদের কাছ থেকে অন্তত ৮০ থেকে ১০০টি সশস্ত্র ড্রোন কিনতে চায়। খরচ হবে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। এই ড্রোনগুলি তার ডানায় গোলাবারুদ নিয়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার ফুট উঁচুতে একটানা ২০ ঘণ্টার কাছাকাছি উড়তে পারে। ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতে পারবে এগুলি।
গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের ঠিক আগে মার্কিন প্রশাসন ভারতের নৌসেনার জন্য ২২টি ড্রোন বিক্রি করার ছাড়পত্র দিয়েছিল। তারও লক্ষ্য ছিল, দেশের উপকূলে ভারত মহাসাগর এলাকায় চিনা ডুবোজাহাজ বা যুদ্ধজাহাজের গতিবিধির দিকে নজর রাখা। সেই প্রথম ‘ন্যাটো’ জোটের বাইরে থাকা কোনও দেশের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি করল আমেরিকা। এ বার চিন-সীমান্তে নজরদারির জন্য বায়ুসেনাকেও ড্রোন বিক্রি করতে তৈরি ট্রাম্প-প্রশাসন। সাউথ ব্লকের কর্তারা বলছেন, বলা বাহুল্য, চিন-সীমান্তের পাশাপাশি, পাকিস্তানের জঙ্গিদের উপরেও নজরদারি চালাতে এই ড্রোন ব্যবহার হবে।
কেন হঠাৎ সশস্ত্র ড্রোনে জোর দিচ্ছে সামরিক বাহিনী?
বায়ুসেনার এক কর্তা বলেন, ‘‘আমেরিকা বা ইজরায়েলের মতো আধুনিক বায়ুসেনায় ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। সেই তুলনায় ভারত মাত্র ১৭৮টি ইজরায়েলের সার্চার ও হেরন শ্রেণির ড্রোন কিনেছে। কিন্তু সেগুলি সবই নজরদারির জন্য। ‘প্রিডেটর’-এর মতো সশস্ত্র ড্রোন আমাদের ঝুলিতে নেই।’’
বায়ুসেনার কর্তাদের যুক্তি, এখন ড্রোন বা ইউএভি আশঙ্কাজনক কিছু দেখলে তাকে ধ্বংস করতে অন্য অস্ত্র কাজে লাগাতে হয়। তার বদলে ওই ড্রোন থেকেই নিশানা করা ভাল। সে কারণেই ইজরায়েলি হেরনগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার নাম ‘প্রোজেক্ট চিতা’।