সেনা অভিযানে ধাক্কা এ দেশেও, কটাক্ষ মোদীর

মধ্যপ্রদেশে ধার জেলায় একটি জনসভায় জাতীয়তাবাদের অস্ত্রেই বিরোধীদের নিশানা করেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪০
Share:

—ফাইল চিত্র।

পাঁচ বছর আগে গান বেধেছিলেন ‘অচ্ছে দিন’ নিয়ে। এ বারে প্রসূন জোশী তৈরি করবেন ‘মোদী বলেই সম্ভব’ নিয়ে গান। বাকি সব বিষয়কে পিছনে ফেলে এখন বিরোধীদের টেক্কা দিতে বিজেপির হাতে একটিই বড় অস্ত্র— জাতীয়তাবাদ। বিরোধীরা সরব হলেও মোদী রোজই এই অস্ত্রের ধার বাড়াচ্ছেন।

Advertisement

যেমন আজ। মধ্যপ্রদেশে ধার জেলায় একটি জনসভায় জাতীয়তাবাদের অস্ত্রেই বিরোধীদের নিশানা করেন মোদী। বলেন, ‘‘মহাভেজাল জোটের নেতারা, পাকিস্তানকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরে সেখানকার পোস্টার বয়ে পরিণত হয়েছেন। এঁরা দেশের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। বায়ুসেনার অভিযানের প্রমাণ চেয়ে সেনার মনোবল ভেঙে দিতে চাইছেন।’’ মোদীর সুবিধা হচ্ছে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতাদের মন্তব্য। যিনি আজও পুলওয়ামায় সন্ত্রাস হামলাকে ‘দুর্ঘটনা’ বলেছেন।

কিন্তু বিরোধীরাও বুঝছে, জাতীয়তাবাদ মোদীর চেনা পিচ। সেখানে দাঁড়িয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারেন অনায়াসে। সে কারণে দ্রুত বেকারত্ব, দুর্নীতি, কৃষি দুর্দশার মতো বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছেন রাহুল গাঁধীরা। আগামিকালই জি-২০ ভুক্ত দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করবেন রাহুল। পুলওয়ামার ঘটনার পর পিছিয়ে যাওয়া কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকটিও হবে এ মাসের ১২ তারিখে। ভোটে মোদীকে হারানোর কৌশল সেখানে স্থির হবে।

Advertisement

এ সব বুঝেই জাতীয়তাবাদের অস্ত্রেই বিরোধীদের আক্রমণের ধার বাড়াচ্ছেন মোদী। আজ যেমন বলেন, ‘‘পাকিস্তানে অভিযান হল, তবে ভারতে বসে থাকা অনেকের গায়ে আঘাত লেগেছে। এক জন নেতা পুলওয়ামা হামলাকে ‘দুর্ঘটনা’ আখ্যা দিয়েছেন। লাদেনকে বলেছেন, ‘শান্তির দূত’। ওরা মোদীকে আক্রমণ করতে চাইছে। আর আমি চাইছি সন্ত্রাসকে শেষ করতে।’’ শ্রোতাদের উদ্দেশে মোদীর মন্তব্য, ‘‘আপনাদের চৌকিদারের সততা বিরোধীদের বিপাকে ফেলে দিয়েছে। সে জন্যই ওঁরা মোদী হটাওয়ের ডাক দিয়েছে।’’

মধ্যপ্রদেশের সভার আগে গুজরাতে আমদাবাদে পেনশন প্রকল্পের সূচনা করতে গিয়েও এ দিন নাম না করে রাহুলকে বিঁধেছেন মোদী। তাঁর মন্তব্য ‘‘সেই নেতার কথা ভাবুন, যিনি বলেন, গরিবি বলে কিছু নেই— এটা শুধু একটা মানসিক অবস্থা। ওদের জন্য গরিবি হল ছবি তোলার একটা উপায়। খালি পেটে শুতে যেতে কেমন লাগে, যাঁরা এটা জানেন না, তাঁরাই বলতে পারেন, গরিবি হল মনের একটা অবস্থা।’’

জাতীয়তাবাদের মোড়কে গত ক’দিন ধরেই বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ ঢাকতে চাইছেন মোদী। জঙ্গি ঘাঁটিতে বায়ুসেনার অভিযানের পরে রাফালের প্রয়োজনীয়তা বড় করে দেখিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, কমিশন পায়নি বলেই ইউপিএ আমলে চুক্তি পিছনো হয়েছিল। এ নিয়ে জবাব দিতে আজ কংগ্রেস সামনে আনে প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিকে। সিএজির রিপোর্ট দেখিয়ে তিনি দাবি করেন, ইউপিএ আমলে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী, যশবন্ত সিন্‌হাদের অভিযোগের পরেই কমিটি গড়া হয়েছিল। মোদীর আমলেই সেই কমিটি রিপোর্ট দেয়। কিন্তু সে সব উপেক্ষা করেই ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করেন মোদী। যখন হ্যালের সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল।

অ্যান্টনি বলেন, সিএজি রিপোর্টই বলছে, মোদী সরকারের ভিতর থেকেই ফ্রান্সের থেকে সার্বভৌম নিশ্চয়তা, সালিশি নিয়ে রক্ষাকবচের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে সব উপেক্ষা করেন। ইউপিএ জমানার মতো প্রযুক্তি হস্তান্তরও করা হয়নি। আর এখন ভোটের আগে অপপ্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অবশ্য বলেন, ‘‘বায়ুসেনার অভিযানের সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। তথ্যের ভিত্তিতেই পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়েছে।’’

কিন্তু যে ভাবে এ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে, বিরোধীরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বিশেষ করে হত জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ আজ রাতে বলেন, ‘‘কিছু মন্ত্রী বলছেন, ৩০০ জঙ্গি মারা গিয়েছে। অমিত শাহ বলছেন ২৫০, যোগী ৪০০, অহলুওয়ালিয়া বলছেন শূন্য। এত সংশয়, সরকারকে তো ব্যাখ্যা দিতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন