জ়োরাবর ট্যাঙ্ক। ছবি: সংগৃহীত।
লাদাখ উপত্যকার চিনা পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা ও রাজস্থান-গুজরাত সীমান্তে পাক ফৌজের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনার হাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে হালকা ট্যাঙ্ক জ়োরাবর তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে দ্রুতগতিতে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা’ (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন বা ডিআরডিও)-র তৈরি এই হালকা ট্যাঙ্কে এখন দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত ‘নাগ’ ক্ষেপণাস্ত্র বসানো এবং তার কার্যকারিতা পরীক্ষার পালা চলছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে আসন্ন শীতের মরসুমেই ভারতীয় সেনার হাতে তুলে দেওয়া হবে জ়োরাবরকে।
পাহাড়ঘেরা লাদাখের শীতল মরুভূমির পাশাপাশি গুজরাতের কচ্ছের রণের অসমতল দুর্গম ভূখণ্ডে ইতিমধ্যেই সফল হয়েছে জ়োরাবরের পরীক্ষা। ‘এল অ্যান্ড টি হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর সহযোগিতায় হয়েছে ‘ট্র্যাক ট্রায়াল’ (ট্যাঙ্ক বহনকারী ইস্পাতের চেনের সক্ষমতার পরীক্ষা)-এও সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে ডিআরডিও-র তৈরি হালকা ট্যাঙ্ক। পরবর্তী পর্যায়ে জ়োরাবর সাজছে অস্ত্রসম্ভারে। প্রথাগত ‘স্মুদ বোর’ কামানের বদলে বসানো হচ্ছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নাগ এমকে-২। মাটি থেকে ছুড়লে ৫০০ মিটার থেকে চার কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ট্যাঙ্ককে নিমেষে গুঁড়িয়ে দিতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। আবার আকাশ থেকে ছুড়লে নাগ এমকে-২ সাত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
২০১৮ সালের শেষপর্বে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নেতৃত্বাধীন ‘প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বিষয়ক কমিটি’র (ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিল বা ডিএসি) সেনাবাহিনীতে ‘নাগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি’ (নামিস)-র অস্ত্রসম্ভার অন্তর্ভুক্তিতে সায় দিয়েছিল। আশির দশকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন বা ডিআরডিও) ‘ইন্টেগ্রেটেড মিসাইল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, নাগ তার মধ্যে অন্যতম। এই প্রকল্পের আওতায় বাকি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হল অগ্নি, পৃথ্বী, আকাশ এবং ত্রিশূল। যার মধ্যে অগ্নি, পৃথ্বী এবং আকাশ ইতিমধ্যেই সেনার হাতে পৌঁছেছে। মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ত্রিশূল ক্ষেপণাস্ত্রের নির্মাণ।
২০২০-র অগস্টে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ‘পিপল্স লিবারেশন আর্মি’র হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পরে সম্ভাব্য চিনা হামলার আশঙ্কায় দ্রুত ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়’ (এলএসি) সেনা মোতায়েন করার সময় খামতি ধরা পড়েছিল হালকা ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে। ডিআরডিও-র তৈরি ‘অর্জুন’, রুশ টি-৯০ (ভীষ্ম), টি-৭২ (অজেয়) ওজনে ভারী হওয়ায় লাদাখের পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। সে সময় চিনা হালকা ট্যাঙ্ক জ়েডটিকিউ-১৫-র মোকাবিলায় ভারতীয় সেনাকে ভরসা করতে হয়েছিল আশির দশকে রাশিয়া থেকে আনা বিএমপি-২ ‘ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল্’ (সাঁজোয়া গাড়ি)-এর উপর। লাদাখে টানাপড়েনের সময়ই সেনার তরফে হালকা ট্যাঙ্কের আবেদন জানানো হয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে। প্রাথমিক ভাবে চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানির কথা ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ স্লোগান অনুসরণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিআরডিও-কে ২০২২ সালের গোড়ায় হালকা ট্যাঙ্ক নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের সহযোগী হয়েছিল এল অ্যান্ড টি। সেই প্রকল্প অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখতে চলেছে।