বর্ষার রাশ ফিলিপিন্সের ঝড়ে

বোঝার উপর ঝড়ের আঁটি! প্রশান্ত মহাসাগরের ‘ছোট্ট ছেলে’ এল নিনো-র দুষ্টুমিতে ভারতের বর্ষা এমনিতেই টালমাটাল। এখন তার দোসর হয়ে এল প্রশান্ত মহাসাগরেরই টাইফুন ‘রাম্মাসুন।’ ফিলিপিন্সে আঘাত হানা ওই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতির উপরে এ দেশে মরসুমি বৃষ্টির ভবিষ্যৎ বহুলাংশে ঝুলে আছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

বোঝার উপর ঝড়ের আঁটি! প্রশান্ত মহাসাগরের ‘ছোট্ট ছেলে’ এল নিনো-র দুষ্টুমিতে ভারতের বর্ষা এমনিতেই টালমাটাল। এখন তার দোসর হয়ে এল প্রশান্ত মহাসাগরেরই টাইফুন ‘রাম্মাসুন।’ ফিলিপিন্সে আঘাত হানা ওই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মতিগতির উপরে এ দেশে মরসুমি বৃষ্টির ভবিষ্যৎ বহুলাংশে ঝুলে আছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।

Advertisement

প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের উষ্ণতাবৃদ্ধির দরুণ পরিবর্তিত বায়ুপ্রবাহ, অর্থাৎ এল নিনো (স্প্যানিশ শব্দটির বাংলা অর্থ ছোট্ট ছেলে)-র প্রভাবে এ বার যে ভারতীয় ভূখণ্ডে স্বাভাবিকের কম বর্ষা হবে, মৌসম ভবনের পূর্বাভাসে তার হুঁশিয়ারি ছিল। বাস্তবের ছবিটাও বেশ বিপন্ন। অনাবৃষ্টি থেকে পূর্বাঞ্চল কিছুটা রেহাই পেলেও সিংহভাগ অঞ্চলে বৃষ্টির ঘাটতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তামাম মধ্য ভারত, পশ্চিম রাজস্থান ও গুজরাতে প্রায় খরা পরিস্থিতি! এরই মধ্যে আবহবিজ্ঞানীরা শুনিয়েছেন আর এক দুঃসংবাদ। ওঁরা বলছেন, ফিলিপিন্সের তটে আছড়ে পড়া সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ও এ বার ভারতীয় বর্ষার গতি-প্রকৃতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চলেছে।

ফিলিপিন্সের টাইফুনটির নাম দেওয়া হয়েছে রাম্মাসুন। সিয়ামিজ শব্দটির অর্থ বজ্রদেবতা। কত তীব্রতা নিয়ে সে কোন দিকে সরবে, ভারত জুড়ে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের বৃষ্টিপাত অনেকটা তারই উপরে নির্ভর করবে বলে আবহবিদদের দাবি। কী ভাবে? আবহবিদেরা বলছেন, ফিলিপিন্সের সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় শক্তি বাড়িয়ে জাপানের দিকে ধেয়ে যেতে পারে। অথবা দুর্বল হয়ে সরে যেতে পারে পশ্চিমে। প্রথমটি ঘটলে এ দেশের বিপদ। কারণ সে ক্ষেত্রে ওই টাইফুন ভারতীয় উপকূল থেকে জলীয় বাষ্প টেনে নিয়ে যাবে। তাতে এখানে বর্ষা দুর্বল হয়ে পড়বে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অবশ্য ভারতের বৃষ্টি-কপাল খোলার আশা। কারণ তখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরি হবে, যা কিনা দেশে শক্ত করবে বর্ষার খুঁটি। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ আশার কথাই শুনিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত রকম-রকম দেখে মনে হচ্ছে, ফিলিপিন্সের টাইফুন পশ্চিমমুখী হয়ে দক্ষিণ চিন সাগরের উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকবে। আর তা হলে আগামী সপ্তাহের গোড়া থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা।” কিন্তু আবহাওয়ার মতিগতি সম্পর্কে নিশ্চয়তা কী? “শেষ মুহূর্তে রাম্মাসুনের অভিমুখ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত দিকে বদলে গেলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।” মন্তব্য এক বিজ্ঞানীর। বস্তুত রাম্মাসুন যখন ফিলিপিন্স উপকূলের কাছে ছিল, তখনই তা ভারতীয় উপকূল থেকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল বিস্তর জলীয় বাষ্প। ফলে ভারতের আকাশে মেঘে টান ধরেছিল। মৌসুমি বায়ুকে দিন পাঁচেক এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। এখন মৌসুমি বায়ু ফের গতি পেয়েছে। কিন্তু ফিলিপিন্সের ঘূর্ণিঝড় ফের তার পথে পাঁচিল খাড়া করবে কি না, তা ভেবেই আবহবিদেরা যথেষ্ট আশঙ্কায়।

Advertisement

কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের পুণে পূর্বাভাস কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আপাতত তাই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের দিকে অতন্দ্র নজর রাখছেন। নজর রাখছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকও। পুণের বিজ্ঞানীদের মতে, টাইফুনটি কত শক্তি নিয়ে কোন অভিমুখে রওনা দেবে, আজ শুক্রবারের মধ্যে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলবে। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশের এ-ও আশা, ভারতের কাছে রাম্মাসুন শাপে বর হয়ে উঠতে পারে। তার ধাক্কায় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এল নিনো।

বজ্রদেবের চোখরাঙানিতে ছোট্ট ছেলের ছটফটানি থামে কি না, সেটাও তো দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন