ভয়ার্ত ছোটবেলাই কি পরীকে বড়বেলায় হিংসাত্মক করে তুলল?

Advertisement
সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ১১:৫৩
Share:

ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নেওয়া ছবি।

ডাক নাম পরী! ভাল নাম ইন্দ্রাণী। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। কিন্তু যতটা আদুরে পরিবেশে বড় হওয়ার কথা, ঠিক ততটাই আতঙ্কে ঘেরা ছিল তার শৈশব। মেয়েকে মাঝে মাঝেই কোমরের বেল্ট খুলে পেটাতেন মদ্যপ বাবা! তাঁর ভয়ে নাকি সর্বদা কাঁপত ছোট্ট পরী। আতঙ্কের রাজত্বে বড় হয়ে ওঠা মেয়েটি তাই বাড়ি থেকে পালানোর স্বপ্ন দেখত। এক দিন সে পালিয়েও গেল বাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে। সেটাই নাকি পরীর বাড়ি থেকে পালানোর প্রথম ঘটনা!

Advertisement

এক কালের অতি চেনা সেই মেয়েটি খবরের শীর্ষ শিরোনামে এসে পড়ায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাঁদেরই এক জন এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বয়সে ইন্দ্রাণীর থেকে বছর তিনেকের বড় তাঁর ওই আত্মীয় জানাচ্ছেন, ছোটবেলাটা খুব অনাদরে কেটেছে পরীর। বাবা-মায়ের টাকা পয়সার অভাব ছিল না। কিন্তু, সুখ ছিল না পরিবারে। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে, পরীর বাবা-মায়ের বৈবাহিক জীবন খুব একটা ভাল ছিল না। মাঝে মাঝেই বরা দম্পতির মধ্যে গণ্ডগোল বাধত। আর তারই শিকার হতে হত ছোট্ট পরীকে।’’

বরা দম্পতির একমাত্র মেয়ে সে। অথচ, যে ভালবাসা, যত্ন এবং গুরুত্ব অন্য পরিবারে একমাত্র সন্তান পেয়ে থাকে তার সিকি ভাগও পায়নি পরী। ওই আত্মীয়ের দাবি, তার ছোটবেলাটা ভয়ানক আতঙ্কের মধ্যেই কেটেছে। অনাদরের পাশাপাশি মারধরও জুটেছে অবিরাম। মাঝে মাঝেই ঘরের মধ্যে ছোট্ট পরীকে আটকে রেখে বাইরে বেরোতেন বরা দম্পতি। বেশ কিছু সময় পর ফিরেও আসতেন তাঁরা। আর তার পরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধত। ওই আত্মীয়ের দাবি, জগড়া শেষমেশ মারধরে পৌঁছত। পরে পরী তাঁর প্রতিবেশী এবং কাছের আত্মীয়দের কাছে বলত, কী ভাবে তার বাবা মদ খেয়ে চুর অবস্থায় ঘর-বন্দি মেয়েকে কোমরের বেল্ট খুলে বেধড়ক মারধর করত। ওই আত্মীয় বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারতাম, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার হতাশা থেকেই অমনটা করতেন উপেন্দ্র বরা। আসলে, পরীর ছোটবেলাটা মোটেই ভাল ছিল না। ও সব সময়েই আতঙ্কে থাকত।’’

Advertisement

আর সে কারণেই ছোটবেলা থেকে এই পরিবেশ থেকে বারে বারে পালাতে চাইত পরী। কয়েক বারের চেষ্টায় সে এক বার সফল হয়। বাড়িরই মাইনে করা গাড়িচালকের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। কিন্তু, রেল স্টেশনে দু’জনেই ধরা পড়ে যায়। মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন উপেন্দ্র। ওই আত্মীয়ের কথায়, ‘‘মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসলে কি হবে! বাড়ি পালানো মেয়েকে স্কুল থেকে বের করে দেন কর্তৃপক্ষ। কাজেই ওর স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ওর বাবা ওকে শিলং পাঠিয়ে দেয়। সেখানে হস্টেলে থাকত পরী।’’

মুক্ত এবং স্বাধীন জীবনের সেটাই ছিল পরীর শুরু। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের ইচ্ছে মতো জীবনকে বইতে দিয়েছে ছোট্ট পরী। একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়েছে। প্রেম থেকে বিয়ে, বিয়ে থেকে সন্তানের মা, তার পর ফের নতুন সম্পর্ক। বড়বেলায় ক্ষমতার বৃত্তে পৌঁছেও থামেননি ইন্দ্রাণী। পাশাপাশি পুরনো জীবনও তাঁর পেছন ছাড়েনি। আজ যখন মেয়েকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তিনি, তখন তাঁর সেই আতঙ্কের ছোটবেলাকে সামনে এনে ওই আত্মীয় প্রশ্ন একটি তুলে দিয়েছেন, তবে কি ভয়ার্ত ছোটবেলাই বড়বেলায় পরীকে আরও হিংসাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে? মনোবিদরা কিন্তু জানাচ্ছেন, সেটা অসম্ভব নয়। কোনও শিশু তার ১১ বছর বয়স পর্যন্ত যদি আতঙ্কজনক পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তবে তার ভবিষ্যত্ জীবনে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার সম্ভবনা থেকেই যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন