Sikhism

সিংঘু সীমানাতেই শিখ ধর্মে দীক্ষা

তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লির সীমানায় কৃষকদের অবরোধ বৃহস্পতিবার ৩৬ দিনে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০৫
Share:

গাজিপুর সীমানায় বিক্ষোভ স্থলে এক শিখ কৃষকের প্রার্থনা। পিটিআই

‘অমৃত সঞ্চার’। শিখদের দীক্ষিত হওয়ার অনুষ্ঠান। দিল্লির সিংঘু সীমানায় কৃষকদের আন্দোলনের ঠাঁইয়ে এ বার সেই দীক্ষা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হচ্ছে।

Advertisement

তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে দিল্লির সীমানায় কৃষকদের অবরোধ বৃহস্পতিবার ৩৬ দিনে পড়েছে। দিল্লির সিংঘু-টিকরি সীমানায় কৃষকদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই পঞ্জাব-হরিয়ানার তরুণ-তরুণীর ভিড় চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করছেন। কেউ লঙ্গরে রান্না করছেন। কেউ ফল, শাকসব্জি, রেশন জোগাড়ে ব্যস্ত। পঞ্জাবের বিভিন্ন গুরুদ্বারা, খালসার তরফেও সমানে সেবাকাজ চলছে। তার মধ্যে জড়িয়েই তরুণরা এ বার শিখ ধর্মে দীক্ষিত হতে চাইছেন।

কৃষক নেতারা বলছেন, প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, এই আন্দোলন শুধুমাত্র কৃষি আইনের বিরোধিতার মধ্যে আটকে থাকছে না। তার শিকড় সমাজের ভিতরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তরুণদের এই দীক্ষিত হওয়ার পিছনেও সেই একই কারণ। ৩ জানুয়ারি সিংঘু সীমানায় ‘অমৃত সঞ্চার’ বা দীক্ষা অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে। শিখ নেতাদের যুক্তি, সিংঘুতে জড়ো হওয়া এত বেশি মানুষ, বিশেষত তরুণরা, দীক্ষিত হতে চাইছেন, যে সেখানেই শিবির খোলা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ২০২২-এর মার্চেই কোভিডের আগের অবস্থায় ফিরবে অর্থনীতি: নীতি আয়োগ

পঞ্জাবের কৃষক সভার প্রবীণ নেতা ধর্মপাল সিংহ সিল বলেন, ‘‘খালসা বা গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটিগুলি শুধু শিখদের জন্য কাজ করে এমন তো নয়। যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিংঘুতে শুধু যে ধনী কৃষক জড়ো হয়েছেন, তা-ও নয়। গরিব চাষি, ভূমিহীন খেতমজুররাও এসেছেন। বয়স্ক, শিশু, মহিলারা রয়েছেন। এই শীতের মধ্যে তাঁদের যে ভাবে দেখভাল করা হচ্ছে, যে ভাবে নিঃস্বার্থ সেবাকাজ চলছে, তা দেখে তরুণদের প্রভাবিত হওয়াই স্বাভাবিক।’’

আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির আড়ালের সেনাপতি শিবপ্রকাশের দায়িত্ব বাড়ল ভোটের মুখে

এই তরুণদেরই উদ্যোগে সপ্তাহে দু’দিন করে সিংঘুতে আন্দোলনকারী কৃষকদের খবরাখবর নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশ হচ্ছে। পঞ্জাব থেকে আসা তরুণ-তরুণীরাই হিন্দি ও গুরমুখীতে সংবাদপত্র প্রকাশ করছেন। ট্রাক্টরের পিছনে লাগানো ট্রলিতে বসেই সব কাজকর্ম চলছে বলে সংবাদপত্রের নাম ‘ট্রলি টাইমস’।

যাঁরা সিংঘুতে আসতে পারেননি, তাঁরাও পিছিয়ে নেই। পঞ্জাবের তথ্যপ্রযুক্তি পেশাদাররা নিজস্ব ‘আইটি সেল’ খুলে ফেলেছেন। ‘কিসান একতা মোর্চা’ নামে ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবে প্রচার শুরু হয়েছে। সদস্যদের বক্তব্য, কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিজেপির আইটি সেলের অপপ্রচারের জবাব দিতেই এর পরিকল্পনা। পঞ্জাবের হনুমানগড় থেকে আসা সুখবিন্দর সিংহ নিজের ট্রাক্টরের পিছনে ট্রলিতে লাইব্রেরি খুলে ফেলেছেন। সেখানে ভগৎ সিংহের জীবনীর সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে জন রিডের ‘দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন’। কৃষক নেতারা গোটা দিল্লিকে তাঁদের সঙ্গে নতুন বছর কাটানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। বছরের শেষ দিনে পঞ্জাবি লেখক সভার সদস্যরা সিংঘুতে হাজির হয়েছেন। নতুন বছর তাঁরা কৃষকদের সঙ্গে কাটাবেন।

দিল্লির সীমানায় সিংঘু-টিকরি-গাজিপুরের পাশাপাশি রাজস্থান-হরিয়ানা সীমানার শাহজাহানপুরেও চাষিরা অবরোধ করছিলেন।

হরিয়ানা পুলিশ তাঁদের সেখানেই আটকে রেখেছিল। বৃহস্পতিবার একদল তরুণ ব্যারিকেড ভেঙে মানেসরের দিতে এগিয়ে যান। হরিয়ানা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও তাঁদের আটকাতে পারেনি।

কৃষক নেতাদের বক্তব্য, দিল্লির সীমানা থেকে জিটি কারনাল রোডের অন্তত ১৮-১৯ কিলোমিটার জুড়ে এখন কৃষকরা রাস্তা আটকে বসে রয়েছেন। গোটা এলাকা ছোটখাটো শহরের চেহারা নিয়েছে। শুধু সিংঘুতেই দিল্লি জল বোর্ডের ২৫টি ট্যাঙ্কারে করে প্রায় সওয়া এক লক্ষ লিটার জল আনতে হচ্ছে। শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটির সঙ্গে ব্রিটেনের খালসা এড-এর মতো সংগঠনও কৃষকদের জন্য সব রকম সাহায্যে এগিয়ে আসছে। গোটা দেশের শিখদের থেকে সাহায্য আসছে। রাস্তার

দু’ধারে হরিয়ানার ৯০টি খাপ বা জাঠদের স্থানীয় সংগঠনের তরফেও দুধ, ফল, শাকসব্জি, চাল-গম পাঠানো হচ্ছে। কৃষক নেতাদের বক্তব্য, পঞ্জাবের শিখদের সঙ্গে হরিয়ানার জাঠদেরও মিলিয়ে দিয়েছে এই আন্দোলন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন