স্বঘোষিত গুরু রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকার। ছবি: সংগৃহীত।
ঘুষ দিয়ে সরকারি অনুমোদন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশের কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে তদন্ত শুরু করে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। এফআইআরে নাম রয়েছে ৩৪ জনের। নাম রয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) সদস্যদেরও। এই এনএমসিই কলেজ পরিদর্শন করে ছাড়পত্র দেয়। কী ভাবে ঘুষের বিনিময়ে সেই ছাড়পত্র দেওয়া হত, তা প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই। কলেজ কর্তৃপক্ষকে আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হত পরিদর্শনের তারিখ, দলে কারা থাকবেন। সেইমতো প্রস্তুতি নিতেন ছাড়পত্র-প্রত্যাশী মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষ। ভুয়ো হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি দেখাতে ক্লোন করা কৃত্রিম আঙুল ব্যবহার করে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে ছাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, অনেক মেডিক্যাল কলেজেই ডাক্তারি পড়ানোর মতো কোনও পরিকাঠামো ছিল না। কোনও শিক্ষক ছিলেন না। তার পরেও সেগুলি মেডিক্যাল কলেজের ছাড়পত্র পেয়েছে। কী ভাবে? সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাড়পত্র-প্রত্যাশী ভুয়ো মেডিক্যাল কলেজগুলিকে পরিদর্শনের দিন আগেই জানিয়ে দেওয়া হত। সেইমতো কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করতেন। ইনদওরের ইনডেক্স মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান সুরেশ সিংহ ভদৌরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভুয়ো হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি দেখাতে ক্লোন করা কৃত্রিম আঙুল ব্যবহার করে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে ছাপ দিতেন। পরিদর্শনকারী দলকে দেখানো হত যে, সেখানে যথেষ্ট চিকিৎসক নিযুক্ত রয়েছেন। এই সুরেশের নাম রয়েছে এফআইআরে। ইনদওরের ওই মেডিক্যাল কলেজও সিবিআইয়ের নজরে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিদর্শনকারী দল এলে মেডিক্যাল কলেজে ভুয়ো রোগী সাজিয়ে আনা হত। সেই রোগী জোগান দিতেন অন্ধ্রপ্রদেশের কাদিরির এজেন্ট বি হরিপ্রসাদ এবং তাঁর সঙ্গী অঙ্কম রামবাবু। এই রামবাবু হায়দরাবাদের বাসিন্দা। এই কাজে সাহায্য করতেন বিশাখাপত্তনমের কৃষ্ণ কিশোরও। এ সব কারণে পরিদর্শনের তারিখ আগে থেকে জানার প্রয়োজন হয়ে পড়ত কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে সেই দিন তাঁদের জানিয়ে দিতেন এনএমসির আধিকারিকেরা। দলে কারা থাকবেন, সেই নামও প্রকাশ করে দিতেন, যাতে সেই পরিদর্শকদেরও আগেভাগে ঘুষ পাঠিয়ে দেওয়া যায়, এমনটাই অভিযোগ। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রেটিং বোর্ড (এমএআরবি)-র প্রাক্তন সদস্য জিতুলাল মিনার বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে এই তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ, ঘুষ হিসেবে রাজস্থানে একটি মন্দির তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। সিবিআইয়ের এফআইআরে রয়েছে মিনারও নাম। অভিযোগ, হাওয়ালার মাধ্যমেও ঘুষের টাকার লেনদেন হত।
সিবিআইয়ের এফআইআরে ৩৪ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে আট জন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিক। পাঁচ জন চিকিৎসকও রয়েছেন, যাঁরা এনএমসির পরিদর্শক দলের সদস্য। এমনটাই জানিয়েছে পিটিআই। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন আট জন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বলছে, এটি দেশের ‘বৃহত্তম মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতি’। ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের গুরুগ্রাম থেকে দক্ষিণের রাজ্যেও ছড়িয়ে রয়েছে শিকড়। সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, সারা দেশে ৪০টি মেডিক্যাল কলেজ এনএমসি-এর আধিকারিকদের ঘুষ দিয়ে, ভুয়ো তথ্য দাখিল করে স্বীকৃতি, ছাড়পত্র আদায় করেছে। সূত্রের খবর, তাদের উদ্দেশ্য ছিল পড়ুয়া ভর্তি করিয়ে টাকা হাতানো। দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে স্বঘোষিত গুরু রবিশঙ্কর মহারাজা ওরফে রাওয়াতপুরা সরকারেরও।