National News

নতুন সমীকরণের জল্পনা উস্কে দিয়ে নবীন-মমতা ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ ওড়িশায়

জাতীয় রাজনীতির ছবিটা বর্তমানে যে রকম, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এক আঞ্চলিক মহারথী নবীন পট্টনায়ক নামের আর এক আঞ্চলিক মহারথীর রাজ্যে তিন দিন কাটাবেন, আর সে সফর সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক থাকবে, তা হতে পারে না, বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Advertisement

দেবারতি সিংহ চৌধুরী

ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ২০:২১
Share:

ভুবনেশ্বরে নিজের বাসভবনে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী স্বাগত জানাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। ছবি: পিটিআই।

কোনও রাজনৈতিক সমীকরণ গড়তে ওড়িশা যাচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— দলনেত্রীর তিন দিনের ওড়িশা সফর শুরু হওয়ার আগে এ কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির ছবিটা বর্তমানে যে রকম, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এক আঞ্চলিক মহারথী নবীন পট্টনায়ক নামের আর এক আঞ্চলিক মহারথীর রাজ্যে তিন দিন কাটাবেন, আর সে সফর সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক থাকবে, তা হতে পারে না, বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের কথাও রইল, জল্পনাও সত্যি হল। নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে মমতার ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ হল, রাজনৈতিক সাক্ষাৎ হল না। কিন্তু আঞ্চলিক দলগুলিকে বিজেপির বিরুদ্ধে একত্রিত করার চেষ্টাও যে শুরু হয়ে গেল, তাও বেশ স্পষ্ট ইঙ্গিতেই বুঝিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি মমতা-নবীন। ছবি: পিটিআই।

ভুবনেশ্বরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাপস পালের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখা হয়েছে মঙ্গলবার। বুধবার মমতা পুরী গিয়েছিলেন জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে। রাতে পুরীর সার্কিট হাউসেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুবনেশ্বর ফিরলেন এবং সোজা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বাসভবনে চলে গেলেন। বিকেল সাড়ে চারটেয় ফুলের তোড়া হাতে নবীনের বাসভবনে ঢোকেন মমতা। সাকুল্যে মিনিট দশেক ছিলেন ভিতরে। তার পর বেরিয়ে আসেন নবীনকে সঙ্গে নিয়েই। বাইরে তখন প্রবল উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষায় মিডিয়া। বিজু জনতা দল (বিজেডি) প্রধান তথা ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও রাজনৈতিক কথা হয়নি। সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাও তাই-ই জানান। কিন্তু বিজেপি-কে রুখতে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে একত্রিত করার প্রয়াস যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তৃণমূলনেত্রী সে কথাও স্পষ্ট করে দেন। তিনি জানান সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির উচিত এক জায়গায় আসা। বিজেপি-কে রুখতেই যে সেই উদ্যোগ জরুরি, সে কথা বলতেও দ্বিধা করেননি মমতা। বিজেপিকে প্রতিরোধ করতে সব আঞ্চলিক দলকে তিনি যে এক জায়গায় আনতে চান, কোনও রাখঢাক ছাড়াই এ দিন সে কথা বলে দেন মমতা। তবে বিজেপি-কে তিনি ভয় পান না বলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি বিজেপিকে বিপদ বলে মনে করি না। ওরা শুধু ভাগাভাগি করতে পারে। হিন্দু-মুসলমানে ভাগাভাগি, এমনকী হিন্দুতে-হিন্দুতেও ভাগাভাগি করে ওরা।’’ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বার্থেও আঞ্চলিক দলগুলির একত্রিত হওয়া প্রয়োজন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত। বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও তৃণমূলনেত্রী জানান।

Advertisement

আরও পড়ুন: আমি সাচ্চা হিন্দু: মমতা

বিজু জনতা দল গঠন করার পর থেকে নবীন পট্টনায়ক কিন্তু বরাবর এনডিএ-ঘনিষ্ঠই ছিলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল না কোনও দিনই। কিন্তু সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওড়িশায় বিজেপির বিস্ময়কর সাফল্যের পর থেকে নবীন-বিজেপি দূরত্ব বেড়েছে। কারণ ওড়িশায় বিজেপি-ই নবীনের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। এ হেন পরিস্থিতিতে নবীনের সঙ্গে যদি এমন কোনও নেত্রীর ‘সৌজন্য’ সাক্ষাৎ হয়, যাঁর দল সংসদের ফ্লোরে বিজেপি-বিরোধিতার অন্যতম প্রধান মুখ, তা হলে নতুন সমীকরণের জল্পনা যে অক্সিজেন পাবেই, সে কথা তৃণমূল এবং বিজেডি নেতারাও ভাল করেই জানেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন