উত্তরপ্রদেশের মানুষজন তাঁকে ‘লেডি দাবাং’ বলেই চেনেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ফ্যান ফলোয়ার সংখ্যায় হার মেনে যান তাবড় তাবড় বলিউড সেলেব থেকে রাজনীতিবিদরা। সেই ‘লেডি দাবাং’ আইএএস অফিসার বি চন্দ্রকলার নাম জড়িয়ে যায় অবৈধ বালি খাদান কেলেঙ্কারিতে। কিন্তু কী করে এই আইএএস অফিসার এত জনপ্রিয় হলেন জেনে নেওয়া যাক।
মাত্র ছ’মাস জেলাশাসক হিসেবে থাকাকালীনই তিনি লাইমলাইটে চলে আসেন। স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে সমাজবাদী পার্টির নেতাদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসার কারণে বুলন্দশহরে বদলিও হয়ে গিয়েছিলেন বি চন্দ্রকলা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি একটি এজেন্সিকে দিয়ে ভিডিয়োও বানাতেন। কনস্ট্রাকশন বিল্ডিংয়ের কাজ ঠিক করে হচ্ছে কি না, রাস্তা পুনর্নিমাণে কোনও ফাঁক থাকছে কি না— এই সব তিনি খতিয়ে দেখতেন। ভুলচুক দেখলে সেখানে ‘লেডি দাবাং’-এর মতোই অ্যাকশন নিতেন বি চন্দ্রকলা।
নানান ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চন্দ্রকলার এই অভিযান চালানোর ভিডিয়োই তৈরি করত তাঁর ভাড়া করা এজেন্সি। আর সে সব ভিডিয়ো চলে যেত দেশের নামীদামি সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছে। চলে আসত সোশ্যাল মিডিয়াতেও। আর তাতেই তিনি উত্তরপ্রদেশের মানুষজনের মনের মণিকোঠায় সহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন।
হ্যাঁ, এই ব্র্যান্ডিংয়ের কারণেই তিনি রাতারাতি টক অব দ্য টাউন। ফেসবুকে এই মুহূর্তে তাঁর ফলোয়ার প্রায় ৮৫ লক্ষ। অখিলেশ যাদব থেকে অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের মতো প্রথম সারির রাজনীতিবিদদেরও পিছনে ফেলে দিয়েছেন বি চন্দ্রকলা।
উত্তরপ্রদেশের হামিরপুরের জেলাশাসক হিসেবে একটি সরকারি আবাসন প্রকল্পের কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, চন্দ্রকলা ছুটেছিলেন তা খতিয়ে দেখতে। আর একটি ভিডিয়োতে, বুলন্দশহরের জেলাশাসক থাকাকালীন সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এক সিভিক অফিসারকে ধমক দিচ্ছিলেন এই অফিসার। এই ভিডিয়ো দুটিই বেশ ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০০৮ সালে আইএএস অফিসার হয়েছিলেন চন্দ্রকলা। তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার দুঃসাহস দেখানোয় এক ১৮ বছর বয়সীকে শ্রীঘরে পাঠিয়েছিলেন এই দুঁদে অফিসার।
বার বার অনাথ আশ্রমের কচিকাঁচাদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া, সোসাইটির প্রথম সারির মানুষজন থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকদের হাতে রাখি বেঁধেও মথুরার মানুষজনের মনে আসন গেড়ে বসেছিলেন চন্দ্রকলা।
এ হেন দুঁদে অফিসারের বিরুদ্ধেই এখন বিরাট দুর্নীতির অভিযোগ। ২০১২-১৪ সালে হামিরপুরের জেলাশাসক ছিলেন চন্দ্রকলা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সময়ে নিজের জেলায় খাদানের ই-টেন্ডার সিস্টেম তিনি লঙ্ঘন করেছেন। অবৈধ ভাবে বালি তোলার অনুমতি দেওয়া এবং লিজ হোল্ডারদের কাছ থেকে মোটা টাকার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর নামে।
৫ জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের ১৪টি জায়গায় তল্লাশি চালায় সিবিআই। বালি খাদান কেলেঙ্কারি কাণ্ডে মোট ১১ জনের নাম ছিল এফআইআর-এ। যাঁদের মধ্যে চন্দ্রকলার নামও রয়েছে। ‘লেডি দাবাং’ অফিসারের বাড়িতেও রেড করে সিবিআই।
এক সিবিআই অফিসারের কথায়, ‘‘মথুরার জেলাশাসক থাকাকালীন সময়ে আয় বহির্ভূত স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি হস্তগত করার অভিযোগেও চন্দ্রকলার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।’’
উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা গায়ত্রীপ্রসাদ প্রজাপতির খুব কাছের ছিলেন বি চন্দ্রকলা।