সুপ্রিম কোর্টে নতুন অভিযোগে আরও ঘোরালো সিবিআইয়ের অন্তর্কলহ।
‘আস্থানা তো আপনা আদমি হ্যায়!’
একটি দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথাবার্তায় সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা সম্পর্কে এমনই মন্তব্য করেছিলেন বলে আজ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করলেন সিবিআইয়েরই ডেপুটি পুলিশ সুপার অজয় কুমার বস্সি।
আর এই অভিযোগের সূত্র ধরেই দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থার অন্তর্কলহ আরও ঘোরালো হল। যা বিড়ম্বনা বাড়াচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কারণ, সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা আস্থানা খোদ মোদীর আস্থাভাজন বলেই বিভিন্ন মহলে পরিচিত।
আজ সুপ্রিম কোর্টে বসসি-র দাবি, আস্থানার সঙ্গেই দুর্নীতিতে জড়িত গোয়েন্দা সংস্থা র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং)-এর উচ্চপদস্থ অফিসার সমন্ত গয়াল। পঞ্জাব ক্যাডারের আইপিএস সমন্ত গয়াল এখন র’-এর স্পেশাল সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত। তিনি র’-এর শীর্ষ পদ ও পঞ্জাব পুলিশের ডিজিপি পদের অন্যতম প্রধান দাবিদার।
আরও পড়ুন: শবরীমালার ছোঁয়া চেতলায়! ৩৪ বছর কালীপুজোয় মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ
বস্সি-র অভিযোগ, হায়দরাবাদের ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুর কাছ থেকে আস্থানার প্রতিনিধি হিসেবে ঘুষ নেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদ। ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে সিবিআইয়ের হাতে মনোজের গ্রেফতারির খবর পেয়েই মনোজের ভাই সোমেশ যোগাযোগ করেন র’ অফিসার সমন্তের সঙ্গে। মনোজ-সোমেশের বাবা দেবেশ্বর প্রসাদ র’-এ কাজ করতেন। সমন্ত যোগাযোগ করেন আস্থানার সঙ্গে। তখনই সোমেশ তাঁর শ্বশুরকে ফোনে আশ্বাস দেন, ‘আস্থানা তো আপনা আদমি হ্যায়!’
বস্সি এত কথা জানলেন কী করে? আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করছিলেন বস্সি। তখনই তিনি ফোনে আড়ি পেতে, কল রেকর্ডস থেকে এ সব জানতে পারেন। সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে আস্থানার সংঘাত প্রকাশ্যে আসার পরেই ওই দু’জনকে ছুটিতে পাঠানো হয়। বস্সি-কে আন্দামানে বদলি করা হয়। আজ নিজের বদলির সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বস্সি। সেই পিটিশনেই তিনি আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তে পাওয়া যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ উগরে দিয়েছেন। বস্সি-র দাবি, এমন প্রমাণ আরও রয়েছে। তাঁর আর্জি, আস্থানার বিরুদ্ধে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত করুক এসআইটি। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-র কাছে এই মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানালে তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকায় ব্যবসায়ী সানা সতীশ বাবুকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হায়দরাবাদ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
খোদ মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এমনিতেই মুখ পুড়িয়েছে সরকারের। এ বার আস্থানার সঙ্গে র’-এর উচ্চপদস্থ অফিসার গয়ালের নামও জড়িয়ে যাওয়ায় সেই বিড়ম্বনা বাড়ল।
সরকারের একটি সূত্রের দাবি, আস্থানার সঙ্গে গয়ালের ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’-র কথা অনেকেই জানেন। আস্থানা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে তাঁর যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে গয়ালকে র’-এর শীর্ষ পদ পাইয়ে দেবেন বলেও সরকারের অন্দরে জল্পনা চলছিল। আস্থানা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জন্য অলোক বর্মার দিকে আঙুল তুলেছেন।
অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানার এই লড়াইয়ে মোদী সরকার যে আস্থানার দিকেই ঝুঁকে, আজ ফের তার প্রমাণ মিলেছে। আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব বস্সির বদলি হিসেবে যাঁকে দেওয়া হয়েছে, সেই সতীশ দাগার আজ দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে নতুন অভিযোগ এনেছেন। আস্থানার ঘনিষ্ঠ সিবিআই অফিসার দেবেন্দ্র কুমারকে গ্রেফতার করেন অলোক বর্মা। দেবেন্দ্রর জামিনের মামলায় আজ দাগারের অভিযোগ, আগের তদন্তকারী দল তাদের হাতে দেবেন্দ্রর একটি মাত্র মোবাইল তুলে দেয়। পরে তাঁরা টেকনিকাল টিমের থেকে সাতটি মোবাইল, একটি আইপ্যাড ও হার্ড ডিস্ক উদ্ধার করেন।
দেবেন্দ্রর জামিন নিয়ে বুধবার সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। দেবেন্দ্রর দাবি, তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে। জামিন না দিলে, জেলে না পাঠিয়ে অন্তত সিবিআই হেফাজতে রাখা হোক। সিবিআইয়ের এক অফিসারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের একটি তদন্তকারী দল সিবিআইয়ের আরেক তদন্তকারী দলের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগ তুলছে বা সিবিআইয়ের অফিসার প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন— এ সবই অভিনব।