দিল্লি বিস্ফোরণে ব্যবহার হয়েছে ‘মাদার অফ সেটান’? ইউরোপে হামলাতেও ব্যবহার, আইএসের হাতে সৃষ্টি ‘শয়তানের মায়ের’!

গত দু’দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হামলায় এই ধরনের বিস্ফোরকের ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার কারণেই হামলাকারী বা জঙ্গিরা এই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৫
Share:

দিল্লির বিস্ফোরণস্থল। ছবি: পিটিআই।

‘মাদার অফ সেটান’-এর ব্যবহার হয়েছিল দিল্লির বিস্ফোরণে? বিস্ফোরকের প্রকৃতি খতিয়ে দেখে অন্তত তেমনই সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। শুধু ‘মাদার অফ সেটান’-ই নয়, এর সঙ্গে ২-৩ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং জ্বালানি তেলেরও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারী সূত্রের খবর। এই সব মিলিয়ে যে বোমাটি বানানো হয়েছিল, সূত্রের খবর, সেটির ওজন ছিল ৪০-৫০ কেজির মতো। এই বোমা এতটাই শক্তিশালী যে, মাটির ৫০ ফুট নীচেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এর প্রভাব ৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তকারী এক সূত্রের খবর, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়ি থেকে যে ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে সেটির আকার যথেষ্ট বড় ছিল। আর তা থেকেই তদন্তকারীদের অনুমান, বোমার আকার বেশ বড় ছিল। তবে সবই এখন তদন্তসাপেক্ষ।

Advertisement

কিন্তু দিল্লির বিস্ফোরণে যে ‘মাদার অফ সেটান’ বা ‘শয়তানের মায়ের’ ব্যবহার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, আদতে সেটি কী ধরনের বিস্ফোরক, কতটা শক্তিশালী, কোথা থেকেই বা এই বিস্ফোরক এল? তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, ট্রায়াসিটোন ট্রাইপেরক্সাইড (টিএটিপি)-কে ‘মাদার অফ সেটান’ বলেই পরিচয় দেওয়া হয়। অত্যন্ত উচ্চমাত্রার এবং সংবেদনশীল বিস্ফোরক এটি। এর বিস্ফোরণের জন্য কোনও ডিটোনেটর প্রয়োজন হয় না। টিএটিপি-র বিস্ফোরণের জন্য একটু উত্তাপ তৈরি করার প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিস্ফোরক এতটাই সংবেদনশীল যে, সামান্য ঘর্ষণ, চাপ বা উত্তাপ বাড়লেই বিস্ফোরণ হতে পারে। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো এর জন্য ডিটোনেটরের প্রয়োজন হয় না। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটাতে গেলে বাইরে থেকে কোনও অনুঘটকের প্রয়োজন হয়। টিএটিপি দিয়ে ‘মিলিটারি গ্রেড’-এর মতো শক্তিশালী আইইডি বানানো যেতে পারে। যার ক্ষমতা টিএনটি (ট্রিনিট্রোটোলুইন)-র ৮০ শতাংশের সমান। তদন্তকারী একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই বিস্ফোরক যে কোনও পর্যায়েই অত্যন্ত ভয়ানক। বানানোর সময় বা বহন করার সময়েও বিস্ফোরণ হতে পারে।

গত দু’দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হামলায় এই ধরনের বিস্ফোরকের ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার কারণেই হামলাকারী বা জঙ্গিরা এই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের বিস্ফোরক তৈরি খরচ খুব একটা বেশি নয়। ঘরোয়া রাসায়নিক ব্যবহার করেই অত্যন্ত উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক বানানো যায়। আর সে কারণেই এই ধরনের বিস্ফোরক বানানোর দিকে বেশি ঝুঁকছে জঙ্গি দলগুলি। যেটির খরচ কম, কিন্তু মারণ এবং ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বিপুল।

Advertisement

২০০১ সালে প্রথম টিএটিপি বিস্ফোরকের ব্যবহার হয়। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানকে ওড়ানোর জন্য রিচার্ড রিড নামে এক ব্যক্তি, যিনি ‘শু বম্বার’ নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। জুতোর সোলের মধ্যে লুকিয়ে বিমানে উঠেছিলেন। কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেননি। ২০০৫ সালে লন্ডনের হামলায় এই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল। যে ঘটনায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৫-তে প্যারিসের বিস্ফোরণেও টিএটিপি বা ‘মাদার অফ সেটান’-এর ব্যবহার হয়। এর পর ২০১৬ সালে ব্রাসেলসে, ২০১৭ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে হামলায় এই বিস্ফোরকের ব্যবহার হয়।

সাধারণ নখপালিশ রিমুভার দিয়েও টিএটিপি বানানো যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএস জঙ্গি সংগঠনের হাতেই সৃষ্টি হয়েছিল এই ধরনের বিস্ফোরকের। তার পর থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন হামলার ক্ষেত্রে এই ধরনের উচ্চমাত্রার এবং বিপুল মারণক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকের ব্যবহার শুরু করেছে। দিল্লির বিস্ফোরণেও এই ‘মাদার অফ সেটান’-এর ব্যবহার হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement