ট্রুডোকে নিয়ে শীতল কেন মোদী, উঠল প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, চলতি সপ্তাহের শেষে মোদীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর। আলোকচিত্রী থেকে শুরু করে দু’দেশের কূটনীতিকেরা তাই সাগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন সেই আলিঙ্গন-মুহূর্তের জন্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫১
Share:

চরকা-কাটা: সবরমতী আশ্রমে সপরিবার ট্রুডো। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

সে বার চমকে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নরেন্দ্র মোদী যে এ ভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরবেন, ভাবতে পারেননি মার্কিন প্রেসি়ডেন্ট। গত বছর হোয়াইট হাউসের ঘটনা। তত দিনে অবশ্য দেশে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে মোদীর ‘হাগপ্লোমেসি’।

Advertisement

কূটনীতিকেরা বলেন, ‘‘মোদীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রবল পুরুষালি স্পর্শ কূটনীতির শরীরী-ভাষায় নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে।’’ সেই ২০১৪ থেকে শুরু। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে, জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, হালে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু— যে যখন এসেছেন, তাঁর আলিঙ্গন থেকে বঞ্চিত হননি। তা হলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোই বা বাদ পড়বেন কেন?

ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার কী হবে, তাকে ছাপিয়েও আজ বড় হয়ে উঠেছে এই প্রশ্নটাই। শনিবার এসেছেন ট্রুডো। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে যাননি মোদী। যেতেই হবে, তেমন কোনও কথা নেই। কিন্তু এর আগে সবার ক্ষেত্রেই গিয়েছিলেন। ট্রুডোকে স্বাগত জানান কৃষি ও কৃষিকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ। মাত্র চার মাস আগে যিনি প্রথম বারের জন্য মন্ত্রী হয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বা তাঁর কোনও ডেপুটি গেলেও হয়তো বিতর্ক এড়ানো যেত। হয়নি। তার উপর এই দু’দিনে মোদী ট্রুডোর সফর নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি সোশ্যাল মিডিয়ায়।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের অবশ্য দাবি, চলতি সপ্তাহের শেষে মোদীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর। আলোকচিত্রী থেকে শুরু করে দু’দেশের কূটনীতিকেরা তাই সাগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন সেই আলিঙ্গন-মুহূর্তের জন্য।

সে তো অন্য কথা। রবিবার ট্রুডো আগরায় যান। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাতে যাননি। আজ গুজরাতেও কেউ নেই। রাতে শুধু মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর সঙ্গে একদফা বৈঠক হয় তাঁর। অথচ এর আগে চিনা, জাপানি কিংবা ইজরায়েলি রাষ্ট্রনেতার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন মোদী। বিরোধী শিবিরের একাংশ একে কানাডার প্রতি অবজ্ঞা বলছে। যার উত্তরে সরকার পক্ষের বক্তব্য— প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত।

কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, ‘‘খালিস্তানি আন্দোলনের প্রতি কানাডা সরকারের সমর্থন, ট্রুডোকে এড়িয়ে যাওয়ার বড় কারণ।’’ কানাডা বন্ধু হলেও, ভারত যে কোনও ভাবেই কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করে না, সেই বার্তাটাও দিতে চাইছেন মোদী। বুধবার অমৃতসরে যাবেন ট্রুডো। সেখানে যদিও ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহের।

মোদীর শীতলতার অন্য ব্যাখ্যাও রয়েছে। দিল্লিতে একটা কথা চালু আছে— মোদী অপমান ভোলেন না। ২০১৬-য় তিনি যখন কানাডায় যান, তাঁকে স্বাগত জানাতে আসেননি ট্রুডো। এটা কি তারই পাল্টা! ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কূটনীতিকদের একাংশের ঘরোয়া আলোচনায় আরও পুরনো কাসুন্দি। ২০০২-এ ঠিক ছিল, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে দাভোসে যাবেন মোদী। কিন্তু গোধরার ঘটনা বদলে দেয় পরিস্থিতি। মোদীকে ভিসা দিতে চায়নি কানাডা। তার পর থেকে বহু আমন্ত্রণ এলেও দাভোসে যাননি মোদী। এ বার অবশ্য গিয়েছেন। চিনের হাতে মাঠ ছাড়তে চাননি বলেই। কানাডার সে বারের আচরণও বিঁধছে মোদীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন