আধারও কি চায় নেটে নজরদারি! 

কেন্দ্রের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের পর নজরদারির অভিযোগ এ বার আধার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৭
Share:

ফাইল ছবি

কেন্দ্রের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের পর নজরদারির অভিযোগ এ বার আধার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ফেসবুক-টুইটারে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কারা, কী সমালোচনা করছেন, বিরোধীদের প্রচারেই কতটা সাড়া মিলছে, এ সবের আঁচ পেতে নেট-দুনিয়ায় নজরদারির জন্য ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরির কাজ শুরু করেছিল সরকার। তৃণমূলের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার পর তা থেকে পিছু হটে কেন্দ্র। মহুয়া এ বার একই অভিযোগ এনেছেন আধার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

আধার কর্তৃপক্ষ একটি ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং এজেন্সি’ তৈরির প্রস্তাব চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে গত জুলাইয়ে। এর বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছেন মহুয়া। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চে তাঁর হয়ে অভিষেক সিঙ্ঘভি অভিযোগ তোলেন, তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের মতো হুবহু একই রকম নজরদারি সংস্থা গড়তে চান আধার কর্তৃপক্ষ। এটা ব্যক্তি স্বাধীনতায় নাক গলানো, মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা।

তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরির প্রস্তাব শুনে বিচারপতিরা মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘যদি সব টুইট, হোয়াটসঅ্যাপ দেখা হয়, তা হলে আমরা নজরদার রাষ্ট্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছি!’’ রায়ের আগেই মন্ত্রক সেই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে। আজ
আধারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আধারের বৈধতা নিয়ে মামলায় তো আধার কর্তৃপক্ষ (ইউআইডিএআই) ঠিক উল্টো যুক্তিই দিয়েছিল। বলেছিল, তারা নজরদারির বিরুদ্ধে!’’ প্রধান বিচারপতি আজ কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকে পরের শুনানিতে কোর্টকে এ বিষয়ে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এই শুনানি হবে।

Advertisement

মহুয়া বলেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেল যখন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের একটি প্রস্তাব প্রত্যাহারের কথা শীর্ষ আদালতে জানিয়েছিলেন, সেই একই সময়ে সরকার আর একটি সংস্থার মাধ্যমে একই রকম নজরদারির প্রস্তাব আনছে— এটা ভারি অদ্ভুত!’’

তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছিল, ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’-এর উদ্দেশ্য সরকারি নীতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। আর ‘সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং এজেন্সি’ তৈরির প্রস্তাব সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে আধার কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এর লক্ষ্য আধার, তার সুবিধা ও ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, ভুল ধারণা দূর করা, নতুন নীতি সম্পর্কে মানুষকে জানানো, মতামত জানা ও ভাবনার আদানপ্রদান।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ‘মনিটরিং’ বা নজরদারি কথাটি তবে আসছে কেন? এবং তার দায়িত্ব কেন বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হচ্ছে?

রাষ্ট্রের নজরদারির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীর যুক্তি, তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক ‘সোশ্যাল মিডিয়া হাব’ তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে এলেও, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অন্তত ৪০টি দফতর ‘অ্যাডভান্সড অ্যাপ্লিকেশন ফর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্স’ বা ‘আসমা’ নামে একটি নজরদারি ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অর্থসাহায্যে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ওই ‘আসমা’ প্রযুক্তি তৈরি করেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের গত বছরের বার্ষিক রিপোর্টই বলছে, কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে ‘স্ট্র্যাটেজিক প্রোজেক্ট’ আখ্যা দিয়েছে। ৪০টি দফতর এই প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। আরও ৭৫টি দফতর তা কাজে লাগাতে চেয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন