সুয়ের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল নাগারা

নাগা চুক্তির প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করলেও চুক্তির পূর্ণ রূপ দেখে যেতে পারলেন না নাগা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ইসাক চিসি সু। আজ দুপুরে দিল্লির হাসপাতালে মারা গেলেন এনএসসিএন (আই-এম) জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সু। বয়স হয়েছিল ৮৫। দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

এনএসসিএন (আই-এম) জঙ্গি গোষ্ঠীর এক অনুষ্ঠানে আইজ্যাক চি সু। — ফাইল চিত্র।

নাগা চুক্তির প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করলেও চুক্তির পূর্ণ রূপ দেখে যেতে পারলেন না নাগা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ইসাক চিসি সু। আজ দুপুরে দিল্লির হাসপাতালে মারা গেলেন এনএসসিএন (আই-এম) জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সু। বয়স হয়েছিল ৮৫। দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। নাগা চুক্তিতে তাঁর স্বাক্ষর ধরে রাখতেই গত বছর ৩ অগস্ট, তড়িঘড়ি অনুষ্ঠান করে দিল্লিতে নাগা চুক্তির প্রস্তাবনা স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হাসপাতালের শুয়েই সই করেছিলেন সু। সুয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে আসেন এনএসসিএন আই-এমের সাধারণ সম্পাদক থুইংলেং মুইভা, সহ-সভাপতি খোলে কন্যাক, কেন্দ্রীয় মধ্যস্থতাকারী আর এন রবি। হাসপাতালেই ছিলেন সুয়ের স্ত্রী, পাঁচ পুত্র ও এক কন্যা।

Advertisement

আজ পর্যন্ত ছ’জন প্রধানমন্ত্রী, ছ’জন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আট জন আইবি প্রধান, ১১ জন শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী, ছ’জন সংঘর্ষবিরতি নজরদারি গ্রুপের চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে বিশ্বের ন’টি দেশের ১৫টি স্থানে ভারত সরকার ও আইএমের শান্তি আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি এই বছরই স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। এনএসসিএন কর্তারা জানান, কেন্দ্র ও আই-এমের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। সকলেই সুয়ের সুস্থ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় ছিলেন। গত বছর ৩৩ দফা প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করার সময় বেজায় খুশি ছিলেন পাঁচ দশক ধরে নাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সু। কিন্তু শেষ দেখাটা হল না।

সম্ভবত আগামীকাল সুয়ের দেহ নাগাল্যান্ডে আনা হবে। শ্রদ্ধা জানানো হবে আইএম সদর দফতর, ক্যাম্প হেব্রনে। পরে জুনেবটো জেলায় সুয়ের জন্মস্থান চিসিলিমি গ্রামে তাঁকে সমাধিস্থ করার কথা। রাজ্য সরকার সুয়ের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করেছে।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, সু বা এনএসসিএনের আন্দোলনকে সাধারণ জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে এক করা চলে না। এই আন্দোলনে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে। নিহত জঙ্গিদের প্রতি বিধানসভায় শ্রদ্ধা জানানো হয়। নাগাদের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা রক্ষায় এনএসসিএনের আন্দোলনকে নাগারা শ্রদ্ধা করেন।

নেতাজির অনুগামী ও জাপান বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়া নাগা নেতা আঙ্গামি ঝাপু ফিজো ভারতের নাগাল্যান্ড দখল মানতে না পেরে ১৯৪৭ সালে ‘নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল’ গড়ে নাগাল্যান্ডকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। ১৯৫০-এর দশকে শিলংয়ের সেন্ট অ্যান্টনি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হয়ে ফিরে এনএনসিতে যোগ দিয়ে সুয়ের সংগ্রামী জীবন শুরু। পরে সংগঠনের বিদেশ সচিব ও সহ-সভাপতিও হন। ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গে নাগা আন্দোলন নিয়ে ছ’দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরে মুইভা ও আরও পাঁচ সঙ্গীকে নিয়ে ১৯৬৮ সালে সু পায়ে হেঁটে মায়ানমার, কাচিন প্রদেশ হয়ে চিন পাড়ি দিয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে শিলং চুক্তির বিরোধিতা করে ১৯৮০ সালের ৩১ জানুয়ারি এনএসসিএন প্রতিষ্ঠা করেন সু, মুইভা ও খাপলাং। এর মধ্যে সু নাগাল্যান্ডের নাগা, খাপলাং মায়ানমারের নাগা এবং মুইভা মণিপুরের টাংখুল উপজাতির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৮ সালে বিস্তর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে বিভাজন হয় এনএসসিএনে। পৃথক হয়ে যান খাপলাং। মায়ানমার, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, আমেরিকা, তাইল্যান্ডে থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া মুইভা-সু’রা পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, আমেরিকার থেকে সাহায্য পেয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালে সংঘর্ষবিরতির পরে দেশে ফিরেছিলেন দু’জন। অবশ্য তার পরেও রাষ্ট্রপুঞ্জ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে জনমত গঠনের কাজ চালাচ্ছিলেন সু। নম্র, শিক্ষকসুলভ সুয়ের মৃত্যুতে শোক জানান মিজো জঙ্গি নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা, আলফা নেতা অনুপ চেতিয়ারাও। নাগাল্যান্ডজুড়ে এদিন শোকদিবস পালিত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন