ইশরত জহান ভুয়ো সংঘর্ষ

প্রাক্তন কর্তার বিরুদ্ধে মামলায় নারাজ কেন্দ্র

আমলার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশের ফলে ইশরত জহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় ধাক্কা খেল সিবিআই। এই মামলায় মূল অভিযুক্ত, প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র কর্তা রাজেন্দ্র কুমার-সহ ৪ আমলার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। আজ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে মন্ত্রক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

আমলার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই নির্দেশের ফলে ইশরত জহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় ধাক্কা খেল সিবিআই। এই মামলায় মূল অভিযুক্ত, প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র কর্তা রাজেন্দ্র কুমার-সহ ৪ আমলার বিরুদ্ধে মামলা চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। আজ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে মন্ত্রক।

Advertisement

২০০৪ সালে গুজরাত পুলিশের সঙ্গে ভুয়ো সংঘর্ষে মারা যান ইশরত-সহ চার তরুণ-তরুণী। উনিশ বছরের ইশরত তখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গুজরাত পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, ওই চার জন লস্কর-ই-তইবার সন্ত্রাসবাদী। গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে তারা সে রাজ্যে এসেছিল। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে গেলে দু’পক্ষের গুলির লড়াইয়ে ‘জঙ্গিদের’ মৃত্যু হয়। এমন কী, লস্করের মুখপত্রেও ইশরতকে ‘ফিদাইন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল বলে দাবি করে গুজরাত পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের একাংশ।

কিন্তু প্রথম থেকেই এটি ভুয়ো সংঘর্ষ বলে সরব ছিল ইশরতের পরিবার ও বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রের তৎকালীন ইউপিএ সরকার তদন্তের ভার দেয় সিবিআইকে। প্রাথমিক তদন্তের পরে সিবিআই জানায়, এটি একটি ভুয়ো সংঘর্ষ এবং ইশরত নিরপরাধ ছিলেন।

Advertisement

তদন্তে সিবিআই অভিযোগের আঙুল তোলে গুজরাত পুলিশ ও তৎকালীন গুজরাতের আইবি-র যুগ্ম অধিকর্তা রাজেন্দ্র কুমারের দিকে। রাজেন্দ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ভুয়ো সংঘর্ষের আগে ইশরতদের জেরা করেছিলেন তিনি। তার পর ইশরত-সহ চার জনকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মারা হয়। এই মামলায় রাজেন্দ্র কুমারকে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল সিবিআই। যা নিয়ে সরকারের শীর্ষ স্তরে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন আইবি কর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে দুই গোয়েন্দা সংস্থার তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, উভয় পক্ষের তথ্য বিনিময় পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।

প্রথাগত ভাবে, কোনও আমলার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ছাড়পত্র লাগে। রাজেন্দ্র কুমার ১৯৭৯ ব্যাচের আইপিএস অফিসার। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চালাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ছাড়পত্র চেয়েছিল সিবিআই। আজ সেই আবেদনই খারিজ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি মন্ত্রকের কর্তারা। শুধু জানিয়েছেন, রাজেন্দ্র-সহ চার জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে কোনও প্রমাণ না মেলায় ওই সিদ্ধান্ত।

প্রাক্তন আইবি কর্তা আসিফ ইব্রাহিমের আমলেও রাজেন্দ্রর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর তদ্বির করেছিল সিবিআই। কিন্তু রাজেন্দ্রর বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর পক্ষপাতী ছিলেন না ইব্রাহিমও। ডিসেম্বরে অবসর নেন ইব্রাহিম। এখন বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে সম্প্রতি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। সেখানেই ঠিক হয়, যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় রাজেন্দ্রর বিরুদ্ধে মামলা চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে না সিবিআইকে। অনুমতি না মেলায় রাজেন্দ্র-সহ চার আমলার বিরুদ্ধে আদালতে যে চার্জশিট জমা পড়েছে, তার ভিত্তিতে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না সংশ্লিষ্ট আদালত।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আজ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘এই আজগুবি সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট যে, কেন্দ্রীয় সরকার কিছু লুকোনোর চেষ্টা করছে। ভুয়ো সংঘর্ষ আড়াল করতে এখন ভুয়ো যুক্তি খাড়া করছে তারা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন