আশা ছাড়বে না বলে গত কালই জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। আজ দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফল পেল তারা। ইরাকে আইএসআইএল জঙ্গিদের হাতে আটক ভারতীয়দের মুক্তির বিষয়ে আংশিক সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্র। ৪৬ জন ভারতীয় নার্সকে আজ মুক্তি দিয়েছে জঙ্গিরা। তাঁদের ভারতে নিয়ে আসতে গিয়েছে বিশেষ বিমান। নার্সদের উদ্ধার করতে ‘অপ্রচলিত পন্থা’ও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
গত কাল জঙ্গিদের হাতে বন্দি হন তিকরিতের হাসপাতালে আটক ৪৬ জন ভারতীয় নার্স। মসুলে ৩৯ জন ভারতীয় অপহৃত হওয়ার পরে এই ঘটনায় আরও বিপাকে পড়ে কেন্দ্র। গত সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল, পরিস্থিতি কঠিন। তবে চলার পথে যে পাথর রয়েছে তাকেই, সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাটকীয় ভাবে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই চেষ্টার ফল পাওয়া গেল। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন আজ জানিয়েছেন, নার্সরা মুক্ত। বাগদাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্তারা মুক্ত নার্সদের নিয়ে ইরবিল বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছেন। উত্তর ইরাকের কুর্দপ্রধান এলাকার ইরবিলে এখনও বেসরকারি বাণিজ্যিক বিমান ওঠানামা করছে। ওই বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং-৭৭৭ বিমান পাঠানো হয়েছে। নার্সদের নিয়ে আগামী কাল সকালে কোচিতে ফিরবে বিমান। ওই নার্সরা কেরলের বাসিন্দা। বিমানে যে প্রতিনিধি দল গিয়েছে তাতে এক মহিলা অফিসার-সহ কেরলের দুই আমলাও রয়েছেন।
আকবরুদ্দিন কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, “আজ এক নাটকীয় ঘনঘটার দিন। আমরা বারবারই বলেছিলাম আশার কোনও শেষ থাকতে নেই।” এই সাফল্যের প্রেরণায় জঙ্গিদের হাতে বাকি ৩৯ জন ভারতীয় বন্দির মুক্তির প্রচেষ্টা দ্বিগুণ উদ্যম পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু কী ভাবে এই কঠিন কাজে সফল হল ভারত?
সরকারি ভাবে আকবরুদ্দিন জানিয়েছেন, স্বাভাবিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া যুদ্ধকালীন সময়ে কাজে লাগে না। ‘অপ্রচলিত পন্থা” কাজে লাগানো হয়েছে। কী এই পন্থা তা জানাননি তিনি। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, নানা পথ ধরে এগিয়েছে কেন্দ্র। এখন কিছুটা দুর্বল হয়েছে আইএসআইএল। কারণ, ইরাকের নুরি অল-মালিকি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ। মসুলের মতো কিছু এলাকা ছাড়া ইরাকি সেনার অভিযানের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে জঙ্গিরা। পশ্চিম এশিয়ার ওই অঞ্চলের জঙ্গিদের উপরে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রবল। সৌদির সঙ্গে তেল-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা রয়েছে নয়াদিল্লির। তাদের মাধ্যমে দরকষাকষিতে দুর্বল আইএসআইএল আর কড়া অবস্থান নিতে পারেনি। ইরাকি সরকারকে যুদ্ধবিমান-সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে রাশিয়া। মস্কোও এই বিষয়ে ভারতকে সাহায্য করেছে। গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেছে আমেরিকা, সিরিয়ার মতো দেশ। ইরবিল বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য ইরাকের স্বশাসিত কুর্দ এলাকার প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চালিয়েছে মন্ত্রক।
আজ তীব্র সংঘর্ষের পর ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের গ্রাম আওজাকে জঙ্গি কবলমুক্ত করেছে ইরাকের সেনাবাহিনী। ইরাক পুলিশ জানিয়েছে, আওজায় গত কাল রাতে সংঘর্ষের পর তিন জঙ্গি নিহত হয়। বাকিরা টাইগ্রিস নদীর পাড় ধরে দক্ষিণের দিকে পালিয়েছে।
ইরাকি সেনার দাবি, আওজা পুনর্দখলের ফলে সামারা থেকে উত্তরের দিকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের পুরোটাই এখন জঙ্গি কবলমুক্ত। যা উত্তর ইরাকের জঙ্গি-অধিকৃত বাকি এলাকা ফের দখলে আনতে কৌশলগত ভাবে সাহায্য করবে সেনাবাহিনীকে। তবে এখনও তিকরিতকে জঙ্গিমুক্ত করতে পারেনি তারা। ইরাকে বেশ কিছু ধাক্কা খেলেও সিরিয়ায় আজ আল-ওমর নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ তেলের খনি আজ দখল করেছে আইএসআইএল।
পশ্চিম এশিয়ার সঙ্কটের প্রভাব পশ্চিমী দুনিয়ায় পড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। সম্প্রতি ব্রিটিশ গোয়েন্দারা জানান, ইরাকে আইএসআইএলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়ছে বেশ কিছু ব্রিটিশ মুসলিম যুবক। পরে ওই জঙ্গিরা দেশে ফিরে নাশকতা ছড়াতে পারে সতর্ক করেছিলেন তাঁরা। আজ ব্রিটেন থেকে আমেরিকাগামী সব বিমানে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আল-কায়দার বিস্ফোরক তৈরির মূল মাথা হাসান অল-আসিরির তৈরি বিস্ফোরক ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যবহার করছে আইএসআইএল। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, কোনও জঙ্গি ওই বিস্ফোরক ব্রিটেন থেকে আমেরিকাগামী বিমানে ব্যবহার করতে পারে। আগেও বেশ কয়েক বার বিমানে বিস্ফোরণ ঘটানোর ছকে আসিরির হাত থাকার কথা জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা।