উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। — ফাইল চিত্র।
নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে নতুন বুলেটপ্রুফ (গুলি নিরোধক) গাড়ি চেয়েছিল তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সচিবালয়। কিন্তু ১৭ মাস কেটে গেলেও সেই গাড়ি মেলেনি! অগত্যা গত নভেম্বর থেকে সাধারণ ইনোভা গাড়িতেই যাতায়াত করছেন ধনখড়। এমনটাই জানিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদন।
ওই প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ধনখড়ের জন্য বরাদ্দ উচ্চ-নিরাপত্তাযুক্ত তিনটি বিএমডব্লিউ গাড়িই ছিল বেশ পুরনো। সে কথা উল্লেখ করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতির জন্য নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়ি চেয়েছিল তাঁর দফতর। ২০২৪ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তার জবাব দিয়ে জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি প্যানেল গঠন করা হবে। কিন্তু অভিযোগ, এর পর মাসের পর মাস কেটে গেলেও আর কোনও উত্তর আসেনি। আসেনি গাড়িও। শেষমেশ নভেম্বর মাসে উপরাষ্ট্রপতির দফতর একটি নন-বুলেটপ্রুফ ইনোভা গাড়ি বেছে নেয়। সেই থেকে সাধারণ এই গাড়িতেই ভ্রমণ করছেন ধনখড়।
সূত্রের খবর, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপরাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পুলিশ আধুনিকীকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, উপরাষ্ট্রপতির সরকারি গাড়িগুলির অবস্থা সঙ্গীন। তিনটি গাড়ির মধ্যে দু’টি গাড়ির বয়স ছ’বছরেরও বেশি। তৃতীয়টির বয়সও প্রায় পাঁচ ছুঁইছুঁই। ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধনখড়কে পুরনো গাড়িগুলির বদলে নতুন বুলেটপ্রুফ গাড়ি দেওয়া হোক। চার মাস পর, ১২ জুন সেই চিঠির জবাব আসে। মন্ত্রকের এক সচিব জানান, তিনটি গাড়ির অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ আধিকারিকদের একটি বোর্ড গঠন করা হবে। এর জন্য ছ’জন বিশেষ আধিকারিককে বাছাই করা হবে। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও নতুন গাড়ি আসেনি। শেষমেশ ২৮ নভেম্বর উপরাষ্ট্রপতির দফতর বুলেটপ্রুফ গাড়ির বদলে একটি সাধারণ ইনোভা গাড়িকে বেছে নেয়।
ভারতের উপরাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত ‘জ়েড প্লাস’ স্তরের নিরাপত্তা পান। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মূলত ৬ ভাগে ভাগ করা যায়। ‘এক্স’, ‘ওয়াই’, ‘ওয়াই প্লাস’, ‘জ়েড’, ‘জ়েড প্লাস’ এবং ‘এসপিজি’ বা ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ’। যাঁর জীবন যতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তাঁর জন্য তত নিবিড় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং শীর্ষ আমলারা এই ধরনের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। ফলে উপরাষ্ট্রপতির বুলেটপ্রুফ গাড়ি নিয়ে টালবাহানায় প্রশ্ন উঠছে ভিআইপি নিরাপত্তা নিয়েও।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই রাতে আচমকা উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান ধনখড়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে ইস্তফাপত্র পাঠান তিনি। পর দিন সকালেই সেই ইস্তফা গৃহীত হয়ে গিয়েছে। ধনখড় ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই এই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত। যদিও এই তত্ত্ব বিরোধী দলগুলি মানতে নারাজ। বেশ কিছু দিন ধরেই উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের পদ থেকে ধনখড়কে সরাতে চেয়েছিলেন বিরোধীরা। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছিলেন। সেই আবহে হঠাৎ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।