মধ্যবিত্তের আশা পূর্ণ, নোট-ধাক্কার পর স্বস্তির ছোঁয়া আয়কর ছাড়ে

নোটের লাইনে দীর্ঘ সময় কাটানোর পরে আশা ছিল সততার দাম দেবে মোদী সরকার। আয়করে সুরাহা পাওয়া যাবে বাজেটে। মধ্যবিত্ত ও বেতনভুক শ্রেণির সেই আশা অপূর্ণ রাখলেন না অরুণ জেটলি। শুক্লা পঞ্চমীর সকালে লোকসভায় সাধারণ বাজেট পেশ করে ব্যক্তিগত আয়করে বেশ কিছু ছাড় ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০৬
Share:

নোটের লাইনে দীর্ঘ সময় কাটানোর পরে আশা ছিল সততার দাম দেবে মোদী সরকার। আয়করে সুরাহা পাওয়া যাবে বাজেটে। মধ্যবিত্ত ও বেতনভুক শ্রেণির সেই আশা অপূর্ণ রাখলেন না অরুণ জেটলি। শুক্লা পঞ্চমীর সকালে লোকসভায় সাধারণ বাজেট পেশ করে ব্যক্তিগত আয়করে বেশ কিছু ছাড় ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

এত দিন আড়াই লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপরে ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো। অর্থমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, সেই হার কমিয়ে এ বার করা হবে ৫ শতাংশ। এবং তিনি জানান, এর ফলে ‘‘যাঁদের করযোগ্য আয় আড়াই থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে তাঁদের কর বাবদ বোঝা হয় শূন্য হয়ে যাবে বা বর্তমান দায়ের অর্ধেক হবে।’’

পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের ক্ষেত্রে এত দিন করের নির্ধারিত অঙ্কের উপরে ২ হাজার টাকা রিবেট বা বিশেষ ছাড় দিত সরকার। জেটলি এ দিন জানান, সেই নিয়মেও কিছুটা বদল করা হচ্ছে। এখন থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের ক্ষেত্রে আড়াই হাজার টাকা বিশেষ ছাড় পাওয়া যাবে। যার মানে, কারও করযোগ্য আয় ৩ লক্ষ টাকা হলে তাঁকে কোনও কর দিতে হবে না, কারণ সে ক্ষেত্রে কর হিসেবে তাঁর প্রদেয় আড়াই হাজার টাকা ওই রিবেটের সঙ্গে কাটাকাটি হয়ে যাবে।

Advertisement

জেটলির ঘোষণা অনুযায়ী, কারও করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকা হলে তাঁর কর বাবদ (শিক্ষা সেস-সহ) সাশ্রয় হবে ১০ হাজার ৮১৫ টাকা। আবার করযোগ্য আয় ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হলে ১২ হাজার ৮৭৫ টাকা সাশ্রয় (শিক্ষা সেস-সহ) হবে।

মধ্যবিত্তদের সুরাহা দিলেও উচ্চবিত্তের আয়ের উপরে নতুন কর চাপিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে জেটলি ঘোষণা করেছেন, যাঁদের করযোগ্য আয় বছরে ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে, তাঁদের করের উপরে ১০ শতাংশ সারচার্জ চাপানো হবে। ১ কোটি টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে আয়করের উপরে এখনকার ১৫ শতাংশ সারচার্জ বহাল থাকবে।

বাজেটে পরিষেবা করের হারের কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। তাই এই বাবদ মধ্যবিত্তের পকেটে এখনই কোনও প্রভাব পড়বে না। জেটলি পরে জানান, যেহেতু ১ জুলাই থেকে পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি চালু করার লক্ষ্য রয়েছে, তাই পরিষেবা করের হারের কোনও পরিবর্তন হলে তা তখনই জানানো হবে।

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াও কিছুটা সরল করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের ব্যক্তিগত আয় ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁরা যাতে এক পৃষ্ঠার একটি ফর্ম ভরেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করার কথাও ভাবছে সরকার।’’ পাশাপাশি বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেতনভুক কর্মীদের উৎস-মূলে কর বাবদ অতিরিক্ত টাকা কেটে নেওয়া হলে পরে তা ফেরতের সময় ওই টাকার উপরে সুদ দেওয়া হবে। তবে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে এখন থেকে লেভি তথা জরিমানা করা হবে।

এর পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, বাজেটে এই পরিমাণ কর সুরাহায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির সকলেই কি সন্তুষ্ট?

বাজেট পেশ করতে গিয়েও জেটলি উল্লেখ করেছেন, আয়কর দেন দেশের সামান্য অংশের মানুষ, মূলত চাকরিজীবীরা। এখন নোট-বাতিল বা ডিজিটাল লেনদেনে জোর দেওয়ার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে আরও মানুষকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ফলে বিজেপি নেতাদের একাংশই মনে করছেন, এত দিন যাঁরা সততার সঙ্গে ঠিকঠাক আয়কর দিয়ে এসেছেন, তাঁরা আরও বেশি সুরাহা আশা করতেই পারেন। জেটলির যুক্তি, যতটা সুরাহা দেওয়া হয়েছে, তাতেই ২২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি দায় বর্তেছে সরকারের ঘাড়ে। সরকারের শীর্ষ নেতাদের আশা, বেতনভুক মধ্যবিত্তদের বড় অংশ এতে খুশি হবেন। বিশেষ করে যাঁদের করযোগ্য আয় ৫ লক্ষ টাকা বা তার কম। তবে বিজেপি নেতারাই মেনে নিচ্ছেন, যাঁদের করযোগ্য আয় ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি, এই বাজেটে তাঁদের প্রাপ্তির অঙ্কটা মোটেই বেশি নয়।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে কর স্ল্যাবের পরিবর্তন করে এবং ৮০সি ধারায় সঞ্চয়ের সুযোগ বাড়িয়ে ১০ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা কর সাশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। তারও আগে ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে কর স্ল্যাবের পরিবর্তন ঘটিয়ে এই শ্রেণির মধ্যবিত্তকে প্রায় ২৩ হাজার টাকা সাশ্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই তুলনায় এ বার তাঁদের প্রাপ্তি হয়েছে কম। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক কৌশলটাই বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষদেরই বেশি খুশি করতে চেয়েছেন মোদী। এমনকী, উচ্চবিত্তের আয়ের উপরে নতুন সারচার্জ বসিয়ে পরোক্ষে গরিবদেরই খুশি করার চেষ্টা হয়েছে। সংখ্যায় তাঁরাই বেশি দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন