যৌথ অধিবেশনের কথা বলে বিতর্ক উস্কে দিলেন অর্থমন্ত্রী

আমেরিকায় বসে সংস্কারের বার্তা দিতে গিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার কতটাই দৃঢ় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ— বিদেশি লগ্নিকারীদের সেই বার্তা দিতে গিয়ে স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চের এক সভায় জেটলি জানান, দরকারে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে জমি বিল পাশ করাবে সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০২:৫১
Share:

আলোচনায় অরুণ জেটলি। ক্যালিফোর্নিয়ায়। ছবি: পিটিআই।

আমেরিকায় বসে সংস্কারের বার্তা দিতে গিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে ঝড় তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার কতটাই দৃঢ় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ— বিদেশি লগ্নিকারীদের সেই বার্তা দিতে গিয়ে স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চের এক সভায় জেটলি জানান, দরকারে সংসদের যৌথ অধিবেশন ডেকে জমি বিল পাশ করাবে সরকার। এতেই জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জমি বিলটি এখন সংসদীয় কমিটির বিবেচনাধীন। বিরোধীদের অভিযোগ, আগেভাগেই যৌথ অধিবেশনের কথা বলে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, সংসদের কমিটির মতামত তাঁদের কাছে গুরুত্বহীন। এবং সরকার তা উপেক্ষা করেই নিজের পছন্দের আকারে জমি বিল পাশ করিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

Advertisement

এমনিতেই সরকারের কাছে এটা বেশ স্পষ্ট যে, সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজেকে সমর্থন করার কারণে সংসদের বাদল অধিবেশনে ঝড়ের মুখে পড়তে হবে। বিশেষ করে জমি বিল বা আর্থিক সংস্কারের অন্য বিলগুলি পাশ করাতে গিয়ে বিরোধীদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু তার আগেই জেটলির মুখে যৌথ অধিবেশনের প্রসঙ্গ আজ আগেভাগেই উস্কে দিল বিরোধীদের।

সন্দেহ নেই, বিরোধী আক্রমণ তীব্র হয়ে উঠবে, সেটা জেনেও জেটলি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যৌথ অধিবেশন ডেকে জমি বিল পাশ করানোর কথা বলেছেন আমেরিকায় বসে। সংসদীয় কমিটিতে ইতিমধ্যেই জমি বিলের যা দুরবস্থা হচ্ছে, তা আশঙ্কা তৈরি করেছে লগ্নিকারীদের মধ্যে। আমেরিকা সফরে সেই আশঙ্কা দূর করার দায় থেকেই জেটলির মুখে উঠে এসেছে যৌথ অধিবেশনের প্রসঙ্গ। ঘরোয়া রাজনীতিতে তা নতুন ঝড় তুলবে, সেটা জেনেও। কারণ, দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ টানতে মোদী-জেটলির তুরুপের তাসই হল জমি অধিগ্রহণ বিল ও পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি)। যে কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এই দু’টি বিলের কথাই বারবারই বলেছেন জেটলি। সমস্যা হল, লোকসভায় থাকলেও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই সরকারের। এর উপরে দু’টি বিলই রাজ্যসভায় হোঁচট খেয়ে এখন সংসদীয় কমিটিতে। দুই কমিটিতেই এক দিকে যেমন কংগ্রেস চাপ তৈরি করছে, তেমনই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো সঙ্ঘ পরিবারের স‌ংগঠনগুলিও জমি বিল নিয়ে আপত্তি তুলেছে।

Advertisement

এই অবস্থায় যৌথ অধিবেশনের কথা বলা ছাড়াও জেটলি এ দিন জানিয়েছেন, কেন্দ্র উন্নয়নের স্বার্থে বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমঙ্গের মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে আরও বেশি সমর্থন জোগাবে। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘অতীতে কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে মোদী সরকারের পদক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি লাভবান হয়েছে।’’

জেটলি আগেও আমেরিকা সফরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তুলেছেন। প্রশংসা করেছেন রাজ্যের শিল্পোদ্যোগের। আজ তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার মতো রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নে সাহায্য করছে।’’ বিহারের জন্যও বিরাট মাপের আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছেন জেটলি। বিহারে ভোট সামনে। সে কথায় মাথায় রাখার পাশাপাশি তৃণমূল ও অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন আদায় করতেই জেটলির এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। জমি বিলের প্রশ্নে ওই কৌশল কাজে আসবে না বলে এ দিনই জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাদের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, জমি বিলে তাঁদের সমর্থনের কোনও প্রশ্নই নেই। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধেই দীর্ঘদিন অনশন করেছিলেন তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিপিএমের অভিযোগ, সংসদীয় প্রক্রিয়ার তোয়াক্কা না করেই এগোতে চাইছে মোদী সরকার। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘সংসদীয় কমিটিতে জমি বিল নিয়ে আলোচনা চলছে। সকলের মত শোনা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ওই বিল নিয়ে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিটি। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, সে সব অগ্রাহ্য করেই এগোতে মোদী সরকার নিজের জমি বিল পাশ করাতে চাইছে।’’ বিলটি পাশ করানোর জন্য মোদী সরকার তৃণমূল, জয়ললিতার প্রতিও নরম বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম।

তৃণমূল-বাম উভয় শিবিরেরই বক্তব্য, যৌথ অধিবেশন ডাকাটা আদৌ সহজ হবে না সরকারের পক্ষে। তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিয়েছেন, যৌথ অধিবেশন ডাকতে হলে তার আগে জমি বিলটি রাজ্যসভায় ভোটাভুটিতে খারিজ হতে হবে। সিপিএমের সংসদীয় দলের প্রধান তথা সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মনে করেন, এ বছর কোনও মতেই যৌথ অধিবেশন ডেকে তা পাশ করানো সম্ভব নয়। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘এ ভাবে এখনই সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকা সম্ভব নয়। জমি বিলের ব্যাপারে সংসদীয় কমিটি রিপোর্ট পেশ করার পরে তা নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। তার পরে যদি সংসদের কোনও কক্ষে তা আটকে যায়, তবে যৌথ অধিবেশন ডাকতে হবে।’’

এই সব পদ্ধতিগত বিষয় জেটলির অজানা নয় মোটেই। প্রশ্ন হল, তবু কেন তিনি আমেরিকায় বসে এ ভাবে যৌথ অধিবেশনের কথা বলে উস্কে দিলেন বিরোধী শিবিরকে? অবশ্যই শিল্পমহলেও শঙ্কা দূর করতে। স্ট্যানফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চের ওই সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘২০১৩ সালে পাশ হওয়া জমি বিলে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। রাজনৈতিক বাদানুবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা। আশা করছি, যৌথ সংসদীয় কমিটি এমন কোনও মতামত দেবে, যাতে রাজি হওয়া যায়। যদি ঐকমত্য না হয়, তা হলে যৌথ অধিবেশন ডাকতে হবে।’’

যদিও যৌথ অধিবেশন ডাকার ব্যাপারে সরকারের এই আগ্রহের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে ইয়েচুরির দাবি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি সরকার রেল লাইন, জাতীয় ও রাজ্য সড়কের দু’পাশে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সব জমি কর্পোরেটদের স্বার্থের অধিগ্রহণ করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই এই জমি বিল আনতে চাইছে।’’ সিপিএম-সহ বামেরা অন্য দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এর সর্বাত্মক বিরোধিতা করবে বলে ঘোষণা করেছেন ইয়েচুরি। বলেছেন, ‘‘বিজেপির পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তা হলে দেশের ঊর্বর জমির এক তৃতীয়াংশ চলে যাবে। কৃষকরা বিপন্ন হবে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাই কোনও ভাবেই এ কাজ করতে দেওয়া সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন