নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে এত দিনের যে অবস্থান, সেখান থেকে কি সরে আসছে মোদীর সরকার? জেটলির টুইট উস্কে দিয়েছে জল্পনা।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি অরুণ জেটলির শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়াল গোটা দেশে। টুইটারে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যা লিখলেন, তা যদি ভারত সরকারের অবস্থান হয়, তা হলে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হওয়ার তত্ত্বে সিলমোহর দিয়ে দিল বিজেপি তথা এনডিএ সরকারও। জেটলির টুইট দেখেই তার বিরোধিতায় সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে জেটলির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
১৯৪৫ সালে জাপানের তাইহোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয় বলে যে তত্ত্ব রয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকার সেই তত্ত্বেই বিশ্বাস রেখেছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক শিবিরের এক বিরাট অংশই সে তত্ত্বে বিশ্বাস রাখতে চায়নি। বিজেপি সেই অংশেই পড়ে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নেতাজি সংক্রান্ত গোপন নথি প্রকাশ্যে আনেন। নেতাজির পরিবারের সদস্যদের নিজের বাসভবনে ডেকে মৃত্যুরহস্যের কিনারা নিয়ে তদন্ত করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনাও করেন। সরাসরি না বললেও মোদী একাধিক বার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বে তিনি বিশ্বাস রাখেন না। কিন্তু সেই মোদী মন্ত্রিসভারই ‘নাম্বার-টু’ অরুণ জেটলি বৃহস্পতিবার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন দৃষ্টান্তমূলক বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা তাঁকে স্মরণ করছি এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’’
এই টুইটে স্পষ্ট যে অরুণ জেটলি বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যুর তত্ত্বে পূর্ণ বিশ্বাস রাখছেন। জেটলির এই অবস্থান কি মোদী সরকারেরই অবস্থান? জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু জেটলির এই টুইটের ঘোর বিরোধিতা করেছেন। পাল্টা টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘আজ রাখি বন্ধন। আমি কারওকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু আজ সকালে অরুণ জেটলির যন্ত্রণাদায়ক টুইট দেখে স্তম্ভিত। আমরা সবাই মর্মাহত।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বে বিশ্বাস রাখেন না। নেতাজির মৃত্যু রহস্যের কিনারার লক্ষ্যে নেতাজি সম্পর্কে গোপন নথি প্রকাশ্যে আনা তিনিই সর্বাগ্রে শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারই নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল সর্বাগ্রে প্রকাশ্যে এনেছিল। তার পর কেন্দ্র সেই পথে হাঁটে। নেতাজির পরিবারের একটি বড় অংশ বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্বকে অসত্য মনে করে। তবে নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্রবধূ তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের প্রাক্তন সাংসদ কৃষ্ণা বসু এবং তাঁর পুত্র তথা বর্তমান সাংসদ সুগত বসু সহ অনেকেই পরিবারের বাকি অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগেও প্রকাশ্যেই এ বিষয়ে নিজের দলের সাংসদের বক্তব্য মানতে অস্বীকার করেছেন। তাই জেটলির টুইট দেখে যে তিনি অসন্তোষ ব্যক্ত করবেনই, তা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন: ইসলামিক স্টেটকেও অস্ত্র জোগালেন হিটলার
জাপানে নেতাজির মৃত্যু হওয়ার তত্ত্বে বিজেপি এই প্রথম সিলমোহর দিল, তা অবশ্য নয়। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জাপান সফরে গিয়ে রেনকোজিতে নেতাজির সমাধি মন্দিরে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছিলেন। তা নিয়েও বিতর্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু মোদী সরকার নেতাজি মৃত্যু রহস্য সংক্রান্ত বিষয়ে যতটা তৎপর, বাজপেয়ী সরকারের সক্রিয়তা তার চেয়ে কিছুটা কমই ছিল। তাই মোদী মন্ত্রিসভার ‘নাম্বার-টু’ তাইহোকুর তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনার তারিখকেই নেতাজির মৃত্যুবার্ষিকী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়ায়, জল্পনা তীব্র হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।