জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের (এনএসএ) বৈঠকের ঠিক আগে আজ পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিল ভারত। এক দিকে জম্মু-কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের গৃহবন্দি করে বোঝানো হয়েছে, আলোচনায় কোনও তৃতীয় পক্ষকে বরদাস্ত করবে না নয়াদিল্লি। আবার কোনও প্ররোচনাতেই যে ভারত এনএসএ পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করবে না তাও ইসলামাবাদকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উধমপুর হামলা-সহ সন্ত্রাসে পাক মদতের বিভিন্ন প্রমাণ নিয়ে ওই বৈঠকে ইসলামাবাদকে প্যাঁচে ফেলতে তৈরি হচ্ছেন এনএসএ অজিত ডোভাল। কিন্তু বার বারই তা বাতিল করতে পাকিস্তান নানা কৌশল নিচ্ছে বলে ধারণা দিল্লির।
গত কাল এনএসএ বৈঠক ভেস্তে দিতে হুরিয়ত তাস খেলেছিল পাকিস্তান। পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতের পক্ষ থেকে সে দেশের এনএসএ সরতাজ আজিজের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় হুরিয়ত নেতাদের। এক বার বাসিতের সঙ্গে হুরিয়তের বৈঠক ঘিরেই বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু এ বার ফাঁদে পা দেয়নি তারা। বরং রাত পোহাতেই সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ উমর ফারুক-সহ কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের গৃহবন্দি করে ফেলে পুলিশ। ঘণ্টা দু’য়েক পরে আবার তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। সরকারি ভাবে এই ঘটনার দায় নেয়নি কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় দিল্লির কোনও ভূমিকাই নেই। যা করার জম্মু-কাশ্মীর পুলিশই করেছে।’’ তবে সেই ব্যাখ্যা মানেনি দিল্লি ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক শিবির। বরং কাশ্মীরের বিজেপি-পিডিপি সরকার ও কেন্দ্রের মধ্যে ‘সমন্বয়’ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির ‘অনুরোধে’ হুরিয়ত নেতাদের ছাড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, এই পদক্ষেপে বোঝানো গিয়েছে যে আলোচনায় তৃতীয় পক্ষকে বরদাস্ত করবে না দিল্লি। আবার হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবের জন্য এনএসএ বৈঠক বাতিলও করবে না। প্রয়োজনে হুরিয়ত নেতাদের আটক করে তাঁদের সঙ্গে সরতাজ আজিজের বৈঠক ভেস্তে দেওয়া হতে পারে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘এনএসএ বৈঠকের পরে হুরিয়তের সঙ্গে সরতাজ কথা বললে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তার প্রভাব কোনও ভাবেই মূল বৈঠকে ফেলা যাবে না।’’ আজিজ-ডোভাল বৈঠকে যে তারা কেবল সন্ত্রাস নিয়েই আলোচনা চায় সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে দিল্লি। রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, ‘‘উফা বৈঠকেই স্থির হয়েছিল এনএসএ বৈঠকে কেবল সন্ত্রাস নিয়ে কথা হবে। আমরা তা-ই চাই।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে যে বিজেপি-র মধ্যে মতভেদ রয়েছে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা। তাঁর মতে, সন্ত্রাস আর এনএসএ বৈঠক এক সঙ্গে চলতে পারে না। ২০০৪ সালে সন্ত্রাস না থামলে ইসলামাবাদের সঙ্গে কথা না বলার নীতি নিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। মোদী সরকার সেই নীতি ত্যাগ করেছে।
কূটনৈতিক টানাপড়েনে আজ কিছুটা সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি বিদেশ মন্ত্রকের। জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার স্পিকারকে আমন্ত্রণ না জানানোয় ইসলামাবাদে কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলন বয়কটের হুমকি দিয়েছিল ভারত। আজ পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা ওই সম্মেলনের আয়োজন করবে না। ইসলামাবাদের বদলে সম্মেলনটি হবে নিউ ইয়র্কে। তাও অক্টোবরে। এ ক্ষেত্রে ভারতের চাপের মুখে পাকিস্তানকে পিছু হটতে হয়েছে বলেই দাবি সাউথ ব্লকের।
সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের চাপের বদলে কাশ্মীর নিয়ে পাল্টা চাপ দিতে চাইছে পাকিস্তান। পাক বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, এনএসএ বৈঠকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলা হবে। নিউ ইয়র্কে কমনওয়েলথ সংসদীয় সম্মেলনেও কাশ্মীর নিয়ে সরব হবেন পাক প্রতিনিধিরা।
‘ফ্যান্টম’ রুখলেন লস্কর প্রধান
জামাত-উদ-দাওয়া তথা লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের আর্জিতে পাকিস্তানে আটকে গেল সইফ আলি খানের ছবি ‘ফ্যান্টম’-এর মুক্তি। সইদের দাবি, তিনি ও তাঁর সংগঠন সম্পর্কে ওই ছবিতে অপপ্রচার করা হয়েছে। ২৬/১১ হামলার পরে এক প্রাক্তন ভারতীয় সেনা অফিসারের নেতৃত্বে পাল্টা অভিযানের কাল্পনিক কাহিনি রয়েছে ‘ফ্যান্টম’-এ। লাহৌর হাইকোর্টের বিচারপতি ছবিটির মুক্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ঠিকই। কিন্তু ভারতীয় ও অন্য দেশের ছবি সহজেই পাকিস্তানের বাজারে পাওয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই বিষয়টি বন্ধ করতে কী পদক্ষেপ করা যায় তা পাক সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।