বিয়ের পর হাতে হাতে বিক্রি হতো ওরা, অভিযোগ তবসুম-ফরিদার

ওঁদের বিয়ে হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। আর এই পাঁচ বছরে কমপক্ষে ন’বার হাতে হাতে বিক্রি হয়েছে ওরা। সঙ্গে চলেছে নানা শারীরিক অত্যাচার। শেষ পর্যন্ত কোনও রকমে পালিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছে তাঁরা। এবং অনেক ভাবনাচিন্তার পর রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হলেন রাঁচির তবসুম ও ফরিদা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৭
Share:

মহিলা কমিশনের অফিসে তবসুম ও ফরিদা। —নিজস্ব চিত্র।

ওঁদের বিয়ে হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। আর এই পাঁচ বছরে কমপক্ষে ন’বার হাতে হাতে বিক্রি হয়েছে ওরা। সঙ্গে চলেছে নানা শারীরিক অত্যাচার। শেষ পর্যন্ত কোনও রকমে পালিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছে তাঁরা। এবং অনেক ভাবনাচিন্তার পর রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হলেন রাঁচির তবসুম ও ফরিদা।

Advertisement

বছর কুড়ির এই দুই মেয়ের পাচার হওয়া বা ফিরে আসাটা ঝাড়খণ্ডের আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে নয় নিজেদের উদ্যোগেই বাড়ি ফিরে মহিলা কমিশনের অফিসে এসে হাজির তাঁরা। এই অত্যাচারের বিচার চেয়েছেন তবসুম, ফরিদা। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজির কথায়, ‘‘ওঁরা সত্যিই সাহসিকতার কাজ করেছেন। ওঁরা নিজে থেকে না এলে এই ঘটনার কথা জানতেই পারতাম না। অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তরা যাতে শাস্তি পায় তার জন্য আমি ডিজিপির সঙ্গে কথা বলব।’’ রাঁচির ডোরান্ডার বাসিন্দা তবসুম এখন এক কন্যা সন্তানের মা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন বয়স ছিল ১৫। স্থানীয় এক এজেন্টের মাধ্যমে আহাদ নামে দিল্লির এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। দিল্লিতে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আহাদ তাঁকে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের পারিবারিক ইটভাটার ব্যবসা ছিল।’’ তবসুম বলেন, ‘‘ইঁটভাটার কাজে আমিও লাগি। কিন্তু তারপরই শুরু হয় অত্যাচার।’’ তবসুমের অভিযোগ, ‘‘টাকার বিনিময়ে কয়েকদিনের জন্য মাঝে মধ্যেই আমার স্বামী আমাকে অন্য শহরে, অন্য কোনও লোকের কাছে ছেড়ে দিত। কয়েকদিন পর আবার বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেত। আবার বিক্রি করত। আমি হাতে হাতে ফিরতাম। আর যেতে রাজি না হলে লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছ্যাঁকা দিত, মারত। পিঠে গরম চা ঢেলে দিত।’’ দু’দিন আগে নিজের দু’বছরের মেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে পালিয়ে এসেছেন তবসুম। ডোরান্ডারই বাসিন্দা ফরিদার অত্যাচারের গল্পটা প্রায় একই। তবে তিনি ফিরেছেন তবসুমের কিছু দিন আগে। ফরিদার কথায়, ‘‘আমি বাড়ি ফিরে কোথাও অভিযোগ জানাতে যেতে সাহস করিনি। তবসুম আমাকে সাহস জোগাল। বলল, চল একসঙ্গে যাই বিচার চাইতে। তাই ওর সঙ্গেই মহিলা কমিশনে চলে এলাম।’’

বছর ২১ এর ফরিদা বলেন, ‘‘ছ’বছর আগে আমাকে আনিস আলি নামে যে বিয়ে করেছিল সে বলেছিল তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের সিমডেগাতে। কিন্তু পরে জানতে পারি আসলে তার বাড়ি হরিয়ানায়।’’ ফরিদার অভিয়োগ, ‘‘বিয়ের পরে আমাকে হরিয়ানায় নিয়ে গিয়ে মজুরের কাজে খাটাত আর বিভিন্ন লোকের কাছে পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করতো।’’ ফরিদার অভিযোগ, নানা অত্যাচার তো চলতই, সেই সঙ্গে গভর্বতী হয়ে গেলেই পরীক্ষা করে দেখা হত গর্ভে ছেলে না মেয়ের ভ্রূণ। মেয়ের ভ্রূণ দেখলেই গর্ভপাত করিয়ে দিত। তবসুমা ও ফরিদা লেখাপড়া জানে না। তাই লিখিত অভিযোগ নেওয়া যায়নি। তাঁদের উপর এই অত্যাচারের কাহিনী রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজি। দিদির কাছে তাঁদের আবেদন: আহাদ, আনিসদের ‘জোর সে জোর
সাজা মিলে।’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন