জগন্নাথপুরের রথের মেলা পাচার ঠেকাতে মরিয়া পুলিশ

এ শুধু মেলা নয়। মেলার আড়ালে নারী পাচারের অন্যতম আন্তর্জাতিক মঞ্চও বটে। প্রতি বছরই এই মেলা থেকে নিখোঁজ হয় একাধিক নারী ও শিশু। অভিযোগ, এই মেলাতেই ওত পেতে থাকে নারী পাচারকারীরা। তাই রাঁচির জগন্নাথপুরের রথের মেলাকে কেন্দ্র করে এ বার অতিরিক্ত সতর্কতা নিচ্ছে পুলিশ ও সিআইডি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

প্রস্তুতি তুঙ্গে। বৃহস্পতিবার পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

এ শুধু মেলা নয়। মেলার আড়ালে নারী পাচারের অন্যতম আন্তর্জাতিক মঞ্চও বটে।

Advertisement

প্রতি বছরই এই মেলা থেকে নিখোঁজ হয় একাধিক নারী ও শিশু। অভিযোগ, এই মেলাতেই ওত পেতে থাকে নারী পাচারকারীরা। তাই রাঁচির জগন্নাথপুরের রথের মেলাকে কেন্দ্র করে এ বার অতিরিক্ত সতর্কতা নিচ্ছে পুলিশ ও সিআইডি। মেলা থেকে এক জন মহিলা বা শিশুও যাতে নিখোঁজ না হয়, সে বিষয়ে পুলিশ যেমন তৎপর, তেমনই সচেতন করা হচ্ছে মেলায় আসা মানুষজনকেও।

আইজি (সিআইডি) সম্পদ মিনার কথায়, ‘‘প্রতিবারই পুলিশ থাকে। তবে এ বার অতিরিক্ত পুলিশ সাদা পোশাকে থাকবে। মেলার বিভিন্ন জায়গায় হেল্পলাইনের নম্বর থাকবে। কেউ নিখোঁজ হলে তাঁর আত্মীয় পরিজনরা হেল্পলাইনে ফোন করে সে খবর জানাতে পারবেন। মেলা থেকে কেউ যাতে না হারান, তা দেখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ এ বার জগন্নাথপুরের রথের মেলা শুরু হচ্ছে ১৮ তারিখ, রথের দিন থেকে। চলবে ন’দিন।

Advertisement

জগন্নাথপুরের এই রথের মেলা দেখতে শুধু রাঁচি বা আশপাশের জেলা থেকে নয়, ঝাড়খণ্ডের প্রতিবেশী

রাজ্য ছত্তীসগঢ় বা পশ্চিমবঙ্গ থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন। ন’দিন ধরে চলা এই মেলাতে লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়। মেলার মাঠ সংলগ্ন ছোট-বড় সব হোটেলই প্রায় মেলা শুরুর দিন দুই আগে থেকে ভর্তি হয়ে যায়। ফলে সিআইডি সতর্ক করছে হোটেলগুলিকেও। সচিত্র পরিচয়পত্র ছাড়া হোটেলে যেন কেউ না থাকে, সে দিকেও বারবার জোর দেওয়া হচ্ছে। মিনা জানিয়েছেন, শুধু হোটেল নয়, মেলা চলাকালীন তল্লাশি চালানো হবে রাঁচি থেকে দিল্লি ও কলকাতাগামী ট্রেনগুলিতেও। এই ট্রেনগুলি করেই কলকাতা আর দিল্লির ‘প্লেসমেন্ট এজেন্সি’তে শিশু ও নাবালিকাদের নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

বাবু বামদেব, পান্নালাল, লতা লকড়া। শিশু ও নারী পাচারে অভিযুক্ত এই সব ব্যাক্তির এজেন্টরা যে এই মেলাতে ঘুরে বেড়ায়, সে সম্পর্কে সিআইডি নিশ্চিত। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত নারী পাচারকারীদের ডায়েরি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় জগন্নাথপুরের মেলার কথা উল্লেখ আছে। তা ছাড়া, পুলিশ দেখেছে, জুলাইয়েই রাঁচি ও তার সংলগ্ন এলাকা থেকে সব থেকে বেশি মেয়ে ও শিশু নিখোঁজ হয়। সিআইডির সন্দেহ, মাসখানেক আগে লতা লকড়া রাঁচিতে এসেছিল শুধু এই মেলার জন্যই। কিন্তু জাল বিছানোর আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় সে। তবে লতার অন্য কোনও প্রতিনিধি মেলাতে থাকবে না, এমন গ্যারান্টি পুলিশ দিচ্ছে না।

সিআইডি সূত্রে খবর, এক দিকে যেমন মেলা থেকে অপহরণের ঘটনা ঘটে, তেমনই গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের টোপ দিয়ে মেলা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আর তাঁদের হদিস মেলে না।

২০১৩ সালে এই মেলাতে এসেই এগারো বছরের মেয়েকে হারিয়েছিলেন খুঁটির সরিতা দেবী। ভিড়ের মধ্যে হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার পর আর মেয়ে ফিরে পাননি তিনি। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রতিবারই মেলায় আসেন তিনি। কিন্তু মেয়ের দেখা মেলেনি আজ পর্যন্ত। সরিতা দেবী বলেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কী ভাবে যে হাত ছাড়া হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।’’ এ বারও হারানো সেই মেয়ের খোঁজে জগন্নাথপুরের মেলায় যাচ্ছেন সরিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন