লখনউয়ের প্রতিবাদ মিছিলে নজীব অহমেদের মা ফতিমা নাফিজ (মাঝখানে)। — ফাইল চিত্র
চার মাস ধরে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্র নজীব অহমেদের সন্ধানে এ বার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুললেন তাঁর মা ফতিমা নাফিজ।
১৪ অক্টোবর জেএনইউয়ের ক্যাম্পাস থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র নজীব। সহপাঠীদের অভিযোগ, আগের রাতে ভোট-প্রচারে এসেছিলেন এবিভিপি-র ছাত্র সংগঠনের তিন-চার সদস্য। প্রথমে নজীবের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাঁদের। পরে নজীবকে মারধর করারও অভিযোগ ওঠে ওই এবিভিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। পরের দিন সকাল থেকে নজীবের আর কোনও খোঁজ পাননি তাঁর বন্ধু বা পরিবারের লোকেরা।
ঘটনার পর থেকে দিল্লিতে পড়ে রয়েছেন নজীবের মা, উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁর বাসিন্দা ফতিমা। গত চার মাসে দফায় দফায় তিনি দেখা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে। কিন্তু ছেলের কোনও সন্ধান মেলেনি। যে গা-ছাড়া মনোভাব দেখিয়ে দিল্লি পুলিশ তদন্ত করছে, তাতে আর প্রশাসনের উপর ভরসা করতে পারছেন না ফতিমা। আজ তাই ছেলের রহস্যজনক অন্তর্ধানের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘অন্তত কোনও হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে এই তদন্ত করাতে হবে।’’
সংবেদনশীল বলে মামলাটি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ দিল্লি পুলিশ। তবে দিল্লি পুলিশের সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনার পরে বিহারের দ্বারভাঙা এবং উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে নজীবকে দেখা গিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। পুলিশের দাবি, তারা সবক’টি ঘটনা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়ে এগোতে চায়। পুলিশের একটি অংশের দাবি, ছাত্র সংঘর্ষের কারণে নজীব নিখোঁজ হননি। পারিবারিক কোনও বিবাদের কারণে হয় স্বেচ্ছায় তিনি লুকিয়ে রয়েছেন, না হলে তাঁকে পরিবারেরই কোনও লোক গুম করে রেখেছে। সেই কারণে দিন কয়েক আগে বদায়ূঁ-তে নজীবের মামার বাড়িতে তল্লাশি চালায় দিল্লি পুলিশ। যদিও সেখানে নজীবের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শুরু থেকেই নজীবের নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে সরব রয়েছে স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অব ইন্ডিয়া (এসআইও)। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে ফতিমার মতোই দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এসআইও সংগঠনের কর্মকতারা।
সমাজকর্মী নাদিম খানের কথায়, ‘‘এবিভিপি-র যে ছাত্রদের বিরুদ্ধে নজীবকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে, চার মাস ধরে সেই অভিযুক্তদের ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদই করে উঠতে পারেনি পুলিশ। আমাদের বিশ্বাস, অভিযুক্তদের লাই ডিটেক্টর বা নার্কো পরীক্ষা হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’’ আদালতের এই পরীক্ষায় কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু অভিযুক্তদের উকিল ওই পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের সময় নষ্ট করে যাচ্ছে। আর সব কিছু দেখেও মুখ বুজে সব দেখছে দিল্লি পুলিশ।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে সময় নষ্ট করার খেলা খেলছে দিল্লি পুলিশ। যাতে ধীরে ধীরে মানুষ এই ঘটনাটি ভুলে যায়।’’
জেএনইউ নিয়ে উদ্বেগ
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ বার সেই বিতর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য জগদীশ কুমারকে চিঠি লিখলেন সারা বিশ্বের চারশোরও বেশি শিক্ষাবিদ। তালিকায় রয়েছেন কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, ইয়েল, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদেরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘জেএনইউ-তে যা হচ্ছে, তা দেখে আমরা চিন্তিত। পড়ুয়াদের স্বাধীন ও অবাধ মত প্রকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছিল। সেই নাম বজায় রাখার জন্য তৎপর হোন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও এমফিলে ভর্তির নতুন নিয়মের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ অজয় মাকেন।