মুথুকৃষ্ণণ। ছবি: সংগৃহীত।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্র জে মুথুকৃষ্ণনের মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেন তাঁর বাবা জীবানন্দম। দিল্লি পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মানসিক অবসাদে গত কাল ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের অভিযোগ, দলিত হওয়ার কারণে জেএনইউয়ে একাধিক বার মানসিক ভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন মুথু। সে কারণেই আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। মৃত ছাত্রের বাবা ও তামিলনাড়ুর বিরোধী দল ডিএমকে-র তাই দাবি, সিবিআই তদন্ত করতে হবে। গ্রেফতার করতে হবে হেনস্থাকারীদের।
বছর খানেক আগে হায়দারবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহিত ভেমুলা মানসিক হেনস্থার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেখানেও উচ্চবর্ণের হাতে নানা কারণে মানসিক ভাবে হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন রোহিত। হায়দারবাদ বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র মুথুর মৃত্যু ফের একই বিতর্ক নতুন করে উস্কে দিল।
গত রবিবার মুথু দিল্লির মুনিরকায় বন্ধুর ফ্ল্যাটে রাতের খাবার খেয়ে সেখানেই একটি ঘরে ঘুমাতে যান। সকালে বহু ডেকেও সাড়া না পেয়ে বন্ধুরা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখতে পান মুথু গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন। মুথু ফেসবুকে তাঁর শেষ পোস্টে লিখে গিয়েছেন, ‘‘হোয়েন ইকুয়ালিটি ইজ ডিনায়েড, এভরিথিং ইজ ডিনায়েড।’’ এর আগেও একাধিক পোস্টে মুথুর বক্তব্য, এমফিল, পিএইচডি-তে ভর্তির ক্ষেত্রে সাম্য নেই। ভাইভা-তেও। প্রান্তিক শ্রেণিকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
মুথুর বাবার অভিযোগ, ‘‘ছেলের মৃত্যুর খবর জানাতে আমাকে একটি ফোন পর্যন্ত করেননি জেএনইউ কর্তৃপক্ষ। জানায় ছেলের এক বন্ধু। সে-ই জানিয়েছে, শুরু থেকেই মুথু জাতিগত বৈষম্যের শিকার হতো।’’ জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, পুলিশের একাংশ মানসিক অবসাদের কথা বলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে। জীবানন্দমের দাবি, ‘‘মুথু আদৌ মানসিক অবসাদে ভুগত না। তার জন্য ওষুধও খেত না।’’ দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (দক্ষিণ) ইশ্বর সিংহের বক্তব্য, ‘‘আত্মহত্যার কারণ জানতে মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়েছে। বৈষম্য নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ তিনি জানাননি। রোহিত ও মুথুর মৃত্যুর মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’
মুথুর পরিবারের জন্য ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পালানীস্বামী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন এ নিয়ে। ডিএমকে নেতা এম স্ট্যালিনের বক্তব্য ‘‘গত বছর অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্সেসে এক পড়ুয়ার মৃত্যু আত্মহত্যা বলে দাবি করেছিল দিল্লি পুলিশ। আজও সেই মৃত্যু-রহস্যের সুরাহা হয়নি। এ বারও একই কথা বলা হচ্ছে। মুথুর মৃত্যু নিয়ে তাই সিবিআই তদন্ত চাই।’’