ধরা দিতে নির্দেশ কোর্টের, মাঝরাতে থানায় খালিদরা

তাঁদের নামে ‘লুক-আউট’ নোটিস জারি করেছিল পুলিশ। আর তাঁরা রবিবার রাতে নাটকীয় ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ফিরে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মাইক্রোফোন হাতে। জেএনইউ ক্যাম্পাসের চৌহদ্দির বাইরে থাকা পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করতে এগোয়নি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৬
Share:

রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার প্রতিবাদসভায় মিশে গেল জেএনইউ আন্দোলনও। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে। ছবি: প্রেম সিংহ

তাঁদের নামে ‘লুক-আউট’ নোটিস জারি করেছিল পুলিশ। আর তাঁরা রবিবার রাতে নাটকীয় ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ফিরে বক্তৃতা দিয়েছিলেন মাইক্রোফোন হাতে। জেএনইউ ক্যাম্পাসের চৌহদ্দির বাইরে থাকা পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করতে এগোয়নি।

Advertisement

প্রায় ৪৮ ঘণ্টা চোখে চোখ রেখে সেই স্নায়ুর লড়াইয়ের একটা পর্ব শেষ হল আজ। দুপুরে হাইকোর্ট বলেছিল, আত্মসমর্পণই করতে হবে দুই ছাত্রকে। আজ রাত ১২টা নাগাদ এক গোপন জায়গায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। বসন্ত বিহার থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। আগামিকাল দুই ছাত্রকে আদালতে তোলার কথা।

দিল্লি হাইকোর্টে আজই ছিল কানহাইয়া কুমারের জামিনের শুনানি। দিল্লি পুলিশের আচমকা বিরোধিতায় সেই শুনানি পিছিয়ে যায় আগামিকাল পর্যন্ত। আজ একই সঙ্গে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন উমর ও অনির্বাণ। তাঁদের আইনজীবী বলেছিলেন, নিজেদের বেছে নেওয়া জায়গা ও সময়ে আত্মসমর্পণ করতে চান দুই ছাত্র। কারণ, তাঁদের উপরে হামলার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আদালত বলে, ‘‘আপনাদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী চলা যাবে না। আত্মসমর্পণ করুন। তা না হলে গ্রেফতার হবেন।’’

Advertisement

সূত্রের দাবি, হাইকোর্টে এই কথা শোনার পর পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন দুই ছাত্রের আইনজীবী। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা আধিকারিকেরা দু’জনকে গাড়িতে তুলে মূল ফটকের বদলে অন্য একটি গেট দিয়ে বেরিয়ে যান। তার পরেই আত্মসমর্পণ। জেনএনইউয়ের ছ’জন ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছিল দিল্লি পুলিশ। তাঁদের মধ্যে তিন জন গ্রেফতার হলেন। তবে আন্দোলনকারীদের কিছুটা উৎসাহিত হওয়ার কারণও ঘটেছে এ দিন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাটিয়ালা হাউস কোর্ট চত্বরে কানহাইয়া এবং সাংবাদিকদের পিটিয়েছিলেন যে তিন আইনজীবী, তাঁদের অন্যতম যশপাল সিংহকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তবে পুলিশের ভোলবদলেও আজ বিস্মিত অনেকে। আগে কানহাইয়ার জামিনের বিরোধিতা না-করার কথা বলেছিলেন কমিশনার বি এস বস্সী। কিন্তু আজ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতিভা রানির এজলাসে শুনানি শুরু হতেই জামিনের বিরোধিতা করেন দিল্লি পুলিশের আইনজীবী তুষার মেটা। বিচারপতি বলেন, ‘‘পুলিশের তো তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। সেটা কোথায়?’’ তুষার জানান, চার্জশিটের আগে জামিন নিয়ে শুনানি হচ্ছে। তাঁরা মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট দেবেন। কারণ, অভিযুক্তকে রিপোর্ট দেখানো যাবে না। বিচারপতি বলেন, ‘‘মুখবন্ধ খামের দরকার নেই। আপনারা আগামিকাল স্টেটাস রিপোর্টটা দিন।’’

কমিশনার বস্সী পরে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বদলেছে। গ্রেফতারির পরে বিবৃতি দিয়ে কানহাইয়া বলেছিলেন, তিনি অনুতপ্ত। তাই জামিনের বিরোধিতা করব না বলেছিলাম। কিন্তু এখন তিনি এমন বিবৃতির কথাই অস্বীকার করছেন।’’ বস্সী জানান, জামিন পেলে কানহাইয়া তদন্তে বাধা দেবেন বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।

জেএনইউ-এ পুলিশি তৎপরতা এবং হায়দরাবাদে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনার যৌথ প্রতিবাদে আজ যন্তর-মন্তরে সমাবেশ করেন পড়ুয়ারা। সেখানে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে বৈষম্য ও তাঁদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা রুখতে আইন হওয়া উচিত।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই দলের সাংসদদের বাজেট অধিবেশনে জেএনইউ-বিতর্কে আগ্রাসী হতে বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রে তেমনই খবর। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘যে দিন প্রধানমন্ত্রী দলকে আগ্রাসী হতে বলছেন, সে দিনই অবস্থান বদলাল পুলিশ। কার নির্দেশে, বোঝা যাচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন