—ফাইল চিত্র।
নিয়োগের নামগন্ধ নেই। তবু পুনর্নিয়োগের দরাজ বন্দোবস্ত!
মাত্র তিন মাস আগেই কর্মীদের অবসরের পরে ‘এক্সটেনশন’ বা কার্যকালের মেয়াদ দু’বছর বাড়িয়ে দিয়েছিল রেল। এ বার সেটা একেবারে পাঁচ বছর করে দেওয়া হল। তবে এই নিয়ে রেল বোর্ডের ১২ ডিসেম্বরের লিখিত নির্দেশের আওতায় রেলের অফিসারেরা আসবেন কি না, তা জানানো হয়নি।
গত সেপ্টেম্বরে রেল মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, অবসরের পরে রেলকর্মীরা ৬২ বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পাবেন। এ বারের নির্দেশে সেই মেয়াদ বেড়ে হল ৬৫ বছর। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী এই প্রকল্প চালু থাকবে ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। রেলের খবর, অবসরকালীন এই চাকরির জন্য নির্ধারিত পদের যা বেতন, তা-ই দেওয়া হবে। তবে ওই সময়ে পেনশনের টাকা মিলবে না। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ বছরে পেনশন প্রাপ্য হলেও পুনর্নিযুক্ত কর্মীরা সেটা পাবেন পাঁচ বছর পর থেকে।
রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, জেনারেল ম্যানেজার থেকে শুরু করে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের হাতে কর্মীদের পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে পুনর্নিয়োগের আগে যাচাই করে নিতে হবে, সংশ্লিষ্ট কর্মীর দক্ষতা আছে কি না এবং তাঁর কর্মজীবনের রিপোর্টে কোনও রকম লাল কালির আঁচড় পড়েছে কি না।
বেকারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তা সত্ত্বেও কেন এই পুনর্নিয়োগ?
রেল মহলের একাংশ মনে করছে, এক সিদ্ধান্তে দু’টি লক্ষ্য পূরণের জন্যই কর্মকালের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হচ্ছে। প্রথমত, এতে খরচের বোঝা হাল্কা হবে। কেননা পুনর্নিযুক্ত কর্মীদের বাড়তি কার্যকালের জন্য গ্র্যাচুইটি, পেনশন দিতে হবে না। মূল বেতনটুকু দিলেই হবে। দ্বিতীয়ত, ওই কর্মীদের দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে আরও পাঁচ বছর রেলের কাজে লাগানো যাবে। রেল সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে রেলে আড়াই লক্ষেরও বেশি পদ শূন্য। নতুন নিয়োগ করতে গেলে রেলকে এখন অনেক বাড়তি টাকার বোঝা বইতে হবে। আর্থিক সঙ্কটে দাঁড়িয়ে রেল এখন ওই বোঝা টানতে রাজি নয়। নতুন নিয়োগ করলে বাড়তি টাকা খরচ হবে, অথচ নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে নবাগতদের মধ্যে পুরনোদের দক্ষতা পাওয়া যাবে না। নতুন কর্মী নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের তৈরি করতে অনেকটা সময় লেগে যাবে। রেলে দক্ষ কর্মীর খুবই অভাব। পুরনোরা সেটা অনেকটাই মেটাবেন।
পুনর্নিয়োগ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত যে অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর আশায় জল ঢেলে দিল, সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন রেলকর্তারাও। তাঁদের কথায়, এমনিতেই নতুন নিয়োগ প্রায় হচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তে নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা আরও কমে গেল।
এই সিদ্ধান্ত ‘বেকার-বিরোধী বা কর্মসংস্থান-বিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন রেলের প্রাক্তন কর্তাদের অনেকে। ‘‘এতে বর্তমান রেলকর্মীদের কিছুটা লাভ হবে ঠিকই। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দেশের বেকার সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে,’’ বলছেন রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষ ঠাকুর।
মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে রেলকর্মী ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে। পূর্ব রেল মেনস কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি পরেশ সরকার বলেছেন, ‘‘এ তো অনেকটা ঠিকে কাজ করার মতো! কোনও কোনও কর্মী অতিরিক্ত পাঁচ বছর কাজ পাবেন ঠিকই। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে সার্বিক ভাবে বেকারদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিল।’’ কর্মী-নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ট্রেন পরিচালন ব্যবস্থায় ত্রুটি-গাফিলতি নিয়ে যে-হারে অভিযোগ উঠছে, তাতে শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ না-করে আর উপায় ছিল না। রেল বোর্ডের নতুন সিদ্ধান্তে কম টাকায় পুরনো দক্ষ কর্মীদের পুনর্নিয়োগ করা যাবে।