বন্যাবিধ্বস্ত জীবনের তার জুড়ছেন জোবি

জোবিদের উদ্যোগের কথা শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ী নিয়াসি ইউনুসও নিজের যন্ত্রচালিত নৌকোটা জোবিদের দিয়ে দেন। শুক্রবার থেকে কুট্টানাদ-চেঙ্গান্নুরের ডুবে যাওয়া গ্রামগুলিতে সেই নৌকো নিয়েই বারবার ছুটছেন জোবিরা। সরকারি উদ্ধারকারী দল যেখানে পৌঁছতে পারছে না, সেখানেও চলে যাচ্ছেন। তিন দিনে প্রায় এক হাজার জলবন্দি মানুষকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন।

Advertisement

ছন্দক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৪১
Share:

জোবি ও তার বন্ধুরা। —নিজস্ব চিত্র।

মাটির নীচে ছিঁড়ে যাওয়া অপটিক্যাল ফাইবার কেবল জোড়া তাঁর কাজ। বানভাসি কেরলে এ বার ‘জীবনের তার’ জুড়ছেন আলাপুঝার জোবি টমাস। এলাকারই চার সাহসী যুবককে নিয়ে উদ্ধারকারী দল গড়েছেন ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশনের ইঞ্জিনিয়ার জোবি। গত তিন দিনে কুট্টানাদ, চেঙ্গান্নুর তালুকের কয়েকশো দুর্গতকে উদ্ধার করে আশ্রয়-শিবিরে এনে তুলেছেন তাঁরা। চাঁদা তুলে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন।

Advertisement

আলাপুঝার কুট্টানাদ, চেঙ্গান্নুর তালুকের প্রায় এক লক্ষ মানুষ জলবন্দি। সরকারি দলও উদ্ধারে নেমেছে। আলাপুঝায় একটি নামী টেলিকম সংস্থার কর্মী জোবি বলছেন, ‘‘বানের জলে ভেসে যাচ্ছে কত মানুষ। চোখের সামনে এ সব দেখে কি আর হাত গুটিয়ে থাকা যায়? চার বন্ধু দীপু, জেভিয়ার, সচিন, ধীরজের কাছে কথাটা পাড়তে ওরাও রাজি।’’

জোবিদের উদ্যোগের কথা শুনে স্থানীয় ব্যবসায়ী নিয়াসি ইউনুসও নিজের যন্ত্রচালিত নৌকোটা জোবিদের দিয়ে দেন। শুক্রবার থেকে কুট্টানাদ-চেঙ্গান্নুরের ডুবে যাওয়া গ্রামগুলিতে সেই নৌকো নিয়েই বারবার ছুটছেন জোবিরা। সরকারি উদ্ধারকারী দল যেখানে পৌঁছতে পারছে না, সেখানেও চলে যাচ্ছেন। তিন দিনে প্রায় এক হাজার জলবন্দি মানুষকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: মাছ বেচে ট্রোল হওয়া সেই ছাত্রী কেরলের বন্যায় দিলেন দেড় লাখ

রবিবার ফোনে জোবি বলছিলেন, ‘‘আলাপুঝায় ব্যাক ওয়াটার আর জল দেখে বড় হয়েছি। কিন্তু চার দিক এমন ভেসে যাওয়া আগে দেখিনি। দিনভর নৌকো নিয়ে ঘুরছি। কিন্তু দিনান্তে নিরাপদ জায়গায় ওদের আনার পরে যখন দেখছি, কোনও শিশু মুখ গুঁজছে মায়ের কোলে, সব ক্লান্তি দূরে।’’

জোবির স্ত্রী পিন্সির কথায়, ‘‘প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। যদি বিপদ হয়! কিন্তু অসহায় মানুষগুলোর কথা ভেবে আটকাইনি।’’ জোবিরা নিজেরা চাঁদা তুলেই এই অভিযান চালাচ্ছেন। সাহায্য করছেন তাঁদের পরিচিতরাও। শিবির থেকে কয়েক জনকে নিজের ‘হোম-স্টে’তে এনে রেখেছেন জোবির বন্ধু দীপু। ফোনে বললেন, ‘‘১১ অগস্ট নেহরু ট্রফিতে (বোট রেস) সচিন তেন্ডুলকরের আসার কথা ছিল। বন্যার জন্য সব ভেস্তে গেল। এখানেও বহু পর্যটকের ওঠার কথা ছিল। তাঁরা না আসায় ঘরগুলো খালিই ছিল।’’

একশো বছর এমন ভয়াবহ বন্যা মনে রাখবে কেরল। আর এই পাঁচ ইয়ারি কথাও মনে রাখবেন মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন