রাষ্ট্রদ্রোহে নজর আইন কমিশনের

যে আইনের জালে গ্রেফতার কানহাইয়া কুমার, যার ধারায় খোদ রাহুল গাঁধী, সীতারাম ইয়েচুরিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ, সেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটিই এ বার নতুন করে খতিয়ে দেখছে আইন মন্ত্রক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৮
Share:

যে আইনের জালে গ্রেফতার কানহাইয়া কুমার, যার ধারায় খোদ রাহুল গাঁধী, সীতারাম ইয়েচুরিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ, সেই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটিই এ বার নতুন করে খতিয়ে দেখছে আইন মন্ত্রক।

Advertisement

গত কালই কানহাইয়ার জামিন সংক্রান্ত মামলায় দিল্লি হাইকোর্ট পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছিল, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের অর্থ তারা আদৌ বোঝে কিনা। আর আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, আইন মন্ত্রকের সুপারিশে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ (এ) ধারাটি ফের খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইন কমিশনকে। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, চলতি মামলার সঙ্গে এই পদক্ষেপের কোনও সম্পর্ক নেই। ২০১৪-র ডিসেম্বরেই আইন মন্ত্রকের কাছে ওই আইনটি খতিয়ে দেখার সুপারিশ করা হয়েছিল।

অনেকেই মনে করছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আইনটির ইতিহাস। পরাধীন ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দমন করতে ১৮৭০-এ দণ্ডবিধি সংশোধন করে রাষ্ট্রদ্রোহের ধারা ঢোকানো হয়। ১৮৯৮ সালে একে আরও কঠোর করা হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৫১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ (এ) ধারাটি আপত্তিকর ও অবাঞ্ছিত। তিনি এই আইন সংশোধনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু সেই কাজ আর এগোয়নি।

Advertisement

পরে বার বার ব্যবহার হয়েছে এই আইন। মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে চিকিৎসক বিনায়ক সেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছিল ছত্তীসগঢ় সরকার। কিন্তু ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বিনায়কের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দেয়। সে সময়ে ইউপিএ সরকারের আইনমন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি ওই আইন পরিবর্তনের কথা বলেও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন।

পরে মোদী সরকারের আমলে রাষ্ট্রদ্রোহের ধারাটি খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করা হয়। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আইন কমিশনকে। আইনটিতে কোনও বদল আনা প্রয়োজন কিনা, তা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আইন কমিশনের একটি কমিটি খতিয়ে দেখছে। কমিটির পর্যালোচনার মূল বিষয় হল ‘রাষ্ট্রবিরোধী কাজ’-এর সংজ্ঞাটি ব্যাখ্যা করা। কারণ, ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কেবল মাত্র দেশবিরোধী স্লোগান দিলেই কাউকে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে গ্রেফতার করা যায় না। সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কাজে লিপ্ত, এমন প্রমাণও থাকতে হবে। এই বিষয় মাথায় রেখে আইনের ভাষায় কোনও পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রুখতে ব্রিটিশ সরকার এই আইন এনেছিল। সময় পাল্টেছে। এমন নয় এখন দেশবিরোধী কাজ হয় না। তবে বর্তমানে আইনটিকে নতুন ভাবে দেখতে হচ্ছে।’’

জেএনইউ প্রসঙ্গে সর্বস্তরে যখন বিতর্ক, তখন সরকারের এ দিনের বক্তব্য বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দিন কয়েক আগেই কেরলে ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘১২৫ বছরে এই আইনের কমই পরিবর্তন হয়েছে।’’ রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন