আবার ফিরে যাবেন আফগানিস্তানে? জুডিথের জবাব ‘একদম না’

দিল্লি বিমানবন্দরের বাইরে তখন ভারত মাতার জয়ধ্বনি। ভিতরে ‘ভারতের মেয়ে’-র চোখে জল। দাদাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কেঁদে চলেছেন জুডিথ ডিসুজা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সঙ্গে সুষমা স্বরাজ। — নিজস্ব চিত্র

দিল্লি বিমানবন্দরের বাইরে তখন ভারতমাতার নামে জয়ধ্বনি। ভিতরে ‘ভারতের মেয়ে’র চোখে জল। দাদাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কেঁদে চলেছেন জুডিথ ডিসুজা।

Advertisement

গত প্রায় দেড়টা মাস আফগানিস্তানে অপহরণকারীদের ডেরায় কেটেছে। উদ্ধার পাওয়ার পর দিল্লি ফিরেও যে সেই ধাক্কা কাটেনি, তা চোখে-মুখেই স্পষ্ট। কোনও রকমে কান্না সামলে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়ে বের হতে‌ই বাইরে বিজেপি সমর্থকদের প্রবল উচ্ছ্বাস আর মিডিয়ার ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি! রীতিমতো শিউরে উঠলেন জুডিথ। ছিটকে ঢুকে গেলেন ভিতরে। তার পর আবার যখন বের হলেন, তখনও তাঁর চোখের জল বাঁধ মানছে না।

দিল্লি বিমানবন্দরে জুডিথকে আনতে গিয়েছিলেন তাঁর দাদা জেরোম ডিসুজা। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ জর্জ বেকার ও মীনাক্ষি লেখি। জর্জ জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি কি আবার ফিরে যাবে আফগানিস্তানে?’ আতঙ্কগ্রস্ত জুডিথ জবাব দেন, ‘‘একদম না। তেমন কোনও ইচ্ছে নেই।’’

Advertisement

বছরখানেক ধরে কাবুলে একটি আন্তর্জাতিক এনজিও আগা খান ফাউন্ডেশন-এর হয়ে কাজ করছিলেন এন্টালির মেয়ে জুডিথ। থাকতেন কাবুলেই। গত ৯ জুন সন্ধ্যায় তাঁকে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরায় সময় অপহরণ করা হয়। গাড়ি থেকে নামিয়ে অন্য গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। প্রথমে সন্দেহ করা হয়েছিল, এর পিছনে রয়েছে তালিবান। পরে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় অপরাধীরাই মুক্তিপণের জন্য এমন ঘটিয়েছে।

শনিবার সকালে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজই প্রথম টুইট করে জানান, জুডিথের উদ্ধার পাওয়ার খবর জানান। জুডিথকে প্রথমে কাবুলে ভারতের দূতাবাসে রাখা হয়েছিল। সেখানে ফোন করে জুডিথের সঙ্গে কথা বলেন সুষমা। তার পরে আবার টুইট করে বলেন, জুডিথ সম্পূর্ণ সুস্থ। আফগান সরকার ও সে দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূত মনপ্রীত ভোরাকে ধন্যবাদও জানান তিনি। মনপ্রীত নিজে আজ এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে জুডিথকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।

বিমানবন্দর থেকে সুষমার বাড়িতে চলে যান জুডিথ। সুষমা তাঁকে জড়িয়ে ধরতেই ফের কেঁদে ফেলেন তিনি। চোখে জল এসে যায় বিদেশমন্ত্রীরও। গত দেড় মাস ধরে জুডিথকে উদ্ধারের জন্য সব রকম চেষ্টা করে গিয়েছেন সুষমা। জুডিথের বাবা ডেনজিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন। সুষমা জুডিথের দাদা জেরোমকে বলেছিলেন, ‘‘জুডিথ তোমাদের বোন এবং ভারতের মেয়ে। আপনি অসুস্থ বাবার খেয়াল রাখুন, আমরা ওঁকে উদ্ধারের সব রকম চেষ্টা করছি।’’ তবে শেষ অবধি ঠিক কী ভাবে জুডিথকে উদ্ধার করা হল, তাঁকে কারা অপহরণ করেছিল, কেন করেছিল, এ সব নিয়ে সরকারের তরফে কেউই মুখ খুলতে চাননি। জুডিথও কিছু বলতে চাননি। সরকারের তরফে বক্তব্য, ৩৯ বছরের জুডিথ এখনও মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে কলকাতায় পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। সুষমা এ দিন জু়ডিথকে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেও নিয়ে যান। জুডিথকে স্বাগত জানিয়ে এবং অাফগান সরকার এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ ঘানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন মোদীও।

কোনও কোনও কূটনৈতিক সূত্রে অবশ্য ইঙ্গিত, মুক্তিপণ দিয়েই ছাড়িয়ে আনা হয়েছে জুডিথকে। কাবুলের তৈমানি থেকে যখন তাঁকে অপহরণ করা হয়, সে সময় গাড়ি করে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন জুডিথ। বন্দুকধারী আততায়ীরা তাঁর সঙ্গে গাড়ির চালক ও এক জন দেহরক্ষীকেও নামিয়ে অন্য গাড়িতে তুলে দেয়। জুডিথের কাছে

জানতে চাওয়া হয়, তিনি বিদেশি কি না। পরিচয় জানার পর অন্য দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় পুলিশ ওই দু’জনকে নিজেদের হেফাজতে রেখে দিয়েছিল। তাদেরও অপহরণে হাত ছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। কারণ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই জানা যায়, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে জুডিথকে কাবুলের উত্তরে শোমালি মালভূমি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ওই দু’জনের বাড়িও শোমালির কাছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ

বা কাবুলে ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র রামকুমার থঙ্গরাজ, কেউই অবশ্য এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

এ দিনই কাবুলে মানববোমার হামলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ভাল খবর এটাই যে, সন্ধে ছ’টা নাগাদ নিরাপদেই দিল্লি এসে নামেন জুডিথরা। বিজেপি সমর্থকরা তত ক্ষণে প্রধানমন্ত্রী এবং সুষমার ছবি-প্ল্যাকার্ড নিয়ে জুডিথকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত। বিমান দিল্লি পৌঁছতেই ভারতমাতা ও নরেন্দ্র মোদীর নামে জয়ধ্বনি শুরু হয়ে যায়। জুডিথের ঘরে ফেরাকে বিজেপির সাফল্য বলে বর্ণনা করা হতে থাকে। বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, জর্জ বেকাররা দাবি করেন, অনেকেই সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে মোদী সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু এই ঘটনা থেকে ফের স্পষ্ট হয়ে গেল, সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কতখানি চিন্তিত ও দায়বদ্ধ। এই দেড় মাস ধরে বিদেশ মন্ত্রক এবং কলকাতায় জুডিথের পরিবারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক যে এ রকম একটা ঘটনা নিয়েও বিজেপি সস্তা রাজনীতি করছে। চেয়েছিলাম, জুডিথ সুস্থ শরীরে ফিরে আসুন। সেটা হওয়াতেই আমি খুশি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন