বিলে সায় মন্ত্রিসভার

বড় অপরাধে কড়া সাজা ১৬ বছরেই

খুন বা ধর্ষণের মতো নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে এ বার থেকে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদেরও গুরুতর শাস্তির ব্যবস্থা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ জন্য নাবালক বিচার আইনে সংশোধন করা হবে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তার বিলে সিলমোহর বসিয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই বিলটি পেশ করতে চাইছে মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৯
Share:

খুন বা ধর্ষণের মতো নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে এ বার থেকে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদেরও গুরুতর শাস্তির ব্যবস্থা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ জন্য নাবালক বিচার আইনে সংশোধন করা হবে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা তার বিলে সিলমোহর বসিয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই বিলটি পেশ করতে চাইছে মোদী সরকার।

Advertisement

বর্তমানে ১৮ বছরের কমবয়সি অপরাধীর বিচার আদালতে নয়, জুভেনাইল বোর্ডে হয়। খুন বা ধর্ষণ, যত বড় অপরাধই হোক না কেন, তাতে ফাঁসি তো দূরের কথা, কারাদণ্ডও হয় না। সর্বাধিক শাস্তি তিন বছর কিশোরদের সংশোধনাগারে কাটানো। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটিতে এই ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটানোর প্রস্তাব রয়েছে।

নতুন আইন হলে নাবালকদের বিচারের জন্য তৈরি বোর্ড প্রথমে ঠিক করবে, নাবালকের অপরাধ কতটা গুরুতর। তিনটি ভাগে অপরাধকে ভাগ করা হবে। সাধারণ, গুরুতর ও নারকীয়। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ যদি গুরুতর বা নারকীয় অপরাধ করে, তা হলে নাবালক বিচার বোর্ড খতিয়ে দেখবে ওই অপরাধটি সে নাবালক হিসেবে না বুঝেই করেছে, নাকি এক জন সাবালকের মতো ফলাফল বুঝেই করেছে। এ জন্য বোর্ডে মনস্তত্ত্ববিদ ও সামাজিক বিশেষজ্ঞদেরও রাখা হবে। নাবালক কেউ গুরুত্ব না বুঝে অপরাধ করে থাকলে, তারও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হবে না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই আসল অপরাধের বিচার শুরু হবে।

Advertisement

অভিযুক্তকে মানসিক ভাবে সাবালক ধরে নেওয়া হলে অন্যান্য পূর্ণবয়স্ক অপরাধীর মতো আদালতেই তার বিচার হবে। শাস্তিও হবে যথেষ্ট কঠোর। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের বক্তব্য, এর ফলে নাবালকের অধিকার রক্ষা ও মহিলাদের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা অপরাধ ঠেকানো— দু’টির মধ্যেই ভারসাম্য থাকবে।

প্রস্তাবিত আইনে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বদলের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে সাবালক কেউ নিম্ন আদালতে অপরাধী সাব্যস্ত হলেও উচ্চ আদালতে গিয়ে দাবি করতে পারে, ঘটনার সময় সে নাবালক ছিল। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের জন্য নয়া আইনে যে বিচার প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা থাকবে তা ওই সাবালক অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ অতীতে নাবালক থাকার সময় অপরাধ করলেও তা গুরুতর না নারকীয়, ফল বুঝে, নাকি না-বুঝে তা করেছে এ সব বিবেচনা করা হবে। এবং সেই অনুযায়ী বিচার হবে। সংসদের স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ছিল ১৬ বছর নয়, আরও একটু বেশি বয়স থেকে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হোক। কিন্তু মোদী মন্ত্রিসভা সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নাবালক বিচার আইন খতিয়ে দেখে একে আরও কঠোর করার কথা বলেছিল। আদালতের বক্তব্য ছিল, খুন বা ধর্ষণের মতো নারকীয় অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালকদের আরও কঠিন শাস্তির প্রয়োজন। কারণ নাবালকদের অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকরী আইন করার কথা ভাবার সময় এসেছে। কারণ, নাবালক অপরাধীর মতো আক্রান্তের জীবনও যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তাটা দেওয়া দরকার। সুপ্রিম কোর্ট এ কথা বলার আগেই অবশ্য এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিল সরকার। মেনকা গাঁধীর নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক বিল তৈরির কাজও সেরে ফেলেছিল, আজ সেই বিলেই সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

নাবালকদের অপরাধ ও তার যথাযথ শাস্তি নিয়ে বিতর্কের শুরু দিল্লির গণধর্ষণ বা নির্ভয়া-কাণ্ডের পর থেকে। ২০১২-র ডিসেম্বরের ওই গণধর্ষণ ও খুনে এক কিশোরও জড়িত ছিল। অন্যদের তুলনায় সে-ই বেশি হিংস্র আচরণ ও অত্যাচার করেছিলবলে অভিযোগ ওঠে। বাকিদের মতো তারও ফাঁসির দাবি ওঠে। কিন্তু বাকিদের ফাঁসির সাজা হলেও মাত্র তিন বছর কিশোর সংশোধনাগারে থাকার শাস্তি হয় তার। কারণ ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। শাস্তির মেয়াদ ফুরোলে চলতি বছরের শেষে তার ছাড়া পাওয়ার কথা।

শুধু নির্ভয়া-কাণ্ড নয়, তার পরে মুম্বইয়ের শক্তি মিলে ধর্ষণের ঘটনাতেও দেখা যায়, অপরাধীরা নাবালক বলে নামমাত্র শাস্তিতেই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। এ সবের জেরেই দাবি ওঠে, খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধে ১৬ বছর বয়স থেকেই সাবালক ধরে নিয়ে বিচার হোক। এই দাবির পক্ষে আন্দোলনকারীদের যুক্তি ছিল, শাস্তি কী হবে তা না ভেবেই কোনও কিশোর খুন বা ধর্ষণ করছে, এটা হতে পারে না।

শিশু ও নাবালকদের অধিকার রক্ষার পক্ষে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়, দু’-একটি মামলায় নাবালকরা জড়িত বলে আইন বদলানো ঠিক নয়। তাতে কিশোরদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে। এটি সংবিধান ও রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার সংক্রান্ত সনদেরও বিরোধী। সুপ্রিম কোর্টও প্রথমে নাবালকদের আইনি সুরক্ষা তুলে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু কড়া শাস্তির পক্ষে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের বড় যুক্তি ছিল পরিসংখ্যান। ২০০২-এ নাবালকদের হাতে খুনের সংখ্যা ছিল ৫৩১টি। ২০১৩-সালে তা বেড়ে হয়েছে ১০০৭টি। একই সময়কালে নাবালকদের ধর্ষণের ঘটনা ৪৮৫ থেকে ১৮৮৪-তে গিয়ে পৌঁছেছে। শীর্ষ আদালতও পরে কঠোর আইনের কথা বলায় আর দ্বিধা করেনি মোদী সরকার, সায় দিয়েছে আগেই তৈরি করে রাখা বিলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন