বরাক-কুশিয়ারা নদীতে বিলুপ্তপ্রায় গাঙ্গেয় ডলফিন বাঁচাতে এগোল করিমগঞ্জের জেলা প্রশাসন। নদীর ওই ‘বাসিন্দাদের’ শিকার রুখতে বিএসএফ কর্তা ও বাংলাদেশের সিলেটের শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করলেন করিমগঞ্জের জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়া। করিমগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমানায় কুশিয়ারা নদীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জলচর প্রাণী। রয়েছে ‘গাঙ্গেটিক রিভার ডলফিন’ও। স্থানীয় ভাবে সেগুলি ‘ফুঁ-মাছ’ নামে পরিচিত। কয়েক মাস আগে করিমগঞ্জের চান্দশ্রীকোণা এলাকায় মৎস্যজীবিদের জালে একটি বড় ডলফিন ধরা পড়ে। এলাকার কয়েক জনের ধারণা, ডলফিনের চর্বি থেকে নিসৃত তেল ব্যথা কমাতে পারে। গুজব ছড়াতেই জালে আটকে থাকা মৃত ডলফিনটির চর্বি কিনতে ভিড় জমে যায়। খবর পেয়ে করিমগঞ্জ জেলার বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কুশিয়ারা নদীর চরেই সেটির দেহ পুঁতে দেওয়া হয়।
এর পরই ডলফিন বাঁচাতে তৎপর হয় করিমগঞ্জ প্রশাসন। এ বিষয়ে গুয়াহাটিস্থিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক সঞ্জীববাবু। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ‘আরণ্যক’ নামে সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্র, কুলশি, সুবনসিড়ি নদীর ডলফিন নিয়ে গবেষণা করছে। তাদের দিকে সাহায্যের হাত এগিয়েছে অসম ও কেন্দ্রীয় সরকারও। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, বরাক ও কুশিয়ারা নদীতেও যে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ডলফিন রয়েছে, সে খবর তাদের কাছে ছিল না। সংস্থার ডলফিন বিশেষজ্ঞ ওয়াকিড করিমগঞ্জে পৌঁছে কুশিয়ারা নদীতে অনুসন্ধান চালান। এ বিষয়ে সঞ্জীববাবু বলেন, ‘‘ওই নদীতে কয়েকটি ডলফিনের খোঁজ মিলেছে। আমরা সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। কুশিয়ারা নদীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মৎস্যজীবিরা মাছ ধরেন। তাঁদের এ নিয়ে সচেতন করতে হবে।’’ সে কারণেই পড়শি দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে সঞ্জীববাবু জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘অসমের বিভিন্ন জায়গায় ডলফিনের চোরাশিকার চলছে। সে গুলির চর্বি থেকে তেল বের করে কালোবাজারে বিক্রি করছে দুষ্কৃতীরা। ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসেবে প্রচার করা হলেও, তার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে কি না— তা স্পষ্ট নয়।’’
তিনি জানান, করিমগঞ্জ জেলায় ডলফিন শিকার রুখতে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। এই কাজে সাহায্য চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সিলেটের প্রশাসনের।