প্রতীকী ছবি।
‘অপারেশন পদ্ম’ আপাতত খতম! কর্নাটকের কংগ্রেস-জেডি(এস) সরকার ফেলার চেষ্টায় ব্যর্থতার ইঙ্গিত দিয়েই বিজেপির বিধায়করা এ বার ঘরে ফিরছেন।
রাজ্যের ১৭৬টি মহকুমার মধ্যে ১৫৬টি যখন ঘোষিত ভাবে খরাকবলিত, সে সময় কর্নাটকের বিজেপি বিধায়কদের তুলে এনে গুরুগ্রামের সাততারা হোটেলে রেখেছিলেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য ছিল, তিনি যখন কংগ্রেসের বিধায়কদের ভাঙানোর চেষ্টা করছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী যাতে বিজেপি বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করা।
শনিবার কিন্তু ইয়েদুরাপ্পা নিজেই জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমাদের বিধায়কেরা দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু ফিরছেন। আমরা কোনও ভাবেই সরকার ফেলার চেষ্টা করব না। কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।’’
প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ইয়েদুরাপ্পা প্রকারান্তরে মেনে নিলেন, তিনি আপাতত ব্যর্থ? কংগ্রেস নিজের বিধায়কদের বেঙ্গালুরুর কাছে একটি রিসর্টে নিয়ে গিয়ে তুলেছিল। বিজেপি গত পাঁচ দিন ধরে ১০৪ জন বিধায়ককে গুরুগ্রামের হোটেলে রাখতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে। অতঃ কিম? ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, তাঁরা এ বার গোটা রাজ্যে সফর করবেন। খরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন।
জেডি(এস) যে সরকার নিয়ে নিশ্চিন্ত, তা বুঝিয়ে দিয়ে আজ মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী এবং তাঁর বাবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া দু’জনেই কলকাতায় ব্রিগেডের সমাবেশে যোগ দেন। সেই মঞ্চ থেকে কুমারস্বামী এ দিন সরকার ফেলার চেষ্টার জন্য বিজেপির দিকে আঙুলও তোলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে। অথচ সেই দিনই বিজেপি কর্নাটকে ঘোড়া কেনাবেচায় নেমেছিল।’’ গণতন্ত্রকে সংখ্যার খেলায় নামিয়ে এনে, বিধায়কদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অন্য দলের নেতারাও কর্নাটক নিয়ে সরব হন।
প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরে বসে মল্লিকার্জুন খড়্গেও বলেন, ‘‘কর্নাটকে আমরা ৮০টা আসন জিতেছি। জেডিএস পেয়েছে ৩৭টা। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার স্বার্থে এবং জোটের প্রয়োজনে আমরা ছোট দলকে সব রকম সাহায্য করেছি। মুখ্যমন্ত্রীও করেছি। ফলে জোট ভেঙে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।’’ তা হলে কংগ্রেসের ৪ বিধায়ক কোথায় ছিলেন? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘দু’জনের সত্যিই সমস্যা ছিল। তার মধ্যে এক জনের সুপ্রিম কোর্টে মামলা ছিল। বাকি দু’জনকে আমরা নোটিস পাঠাব বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখনই জোট ভাঙার কোনও প্রশ্ন উঠছে না।’’
এমতাবস্থায় ‘অপারেশন পদ্ম’-এর ব্যর্থতার দরুণ ইয়েদুরাপ্পাকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কোপে পড়তে হতে পারে বলেও জল্পনা তুঙ্গে। লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যের দায়িত্ব থেকে ইয়েদুরাপ্পাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে অনেকের মত। কারণ বিজেপির লক্ষ্যই ছিল, কংগ্রেস-জেডি(এস) সরকারের জোটে ধাক্কা দিয়ে কর্নাটকের সিংহভাগ লোকসভা আসন ছিনিয়ে নেওয়া। ইয়েদুরাপ্পা অবশ্য দমছেন না। তাঁর দাবি, কংগ্রেস ও জেডি(এস)-এর জোটে আপনা থেকেই ফাটল ধরবে। শুধু আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের জন্য অপেক্ষা।