প্রতীকী ছি৫ি।
উত্তরপ্রদেশের মতো সর্বত্র নয়, এলাকাভিত্তিক মেরুকরণের কৌশলেই কর্নাটকে কংগ্রসকে ধরাশায়ী করল বিজেপি।
মূলত উপকূলবর্তী কর্নাটকে হিন্দুত্বের উগ্র প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। ঠিক করেই নেওয়া হয়, এক দিকে প্রধানমন্ত্রী গোটা রাজ্যে উন্নয়নের বার্তা দেবেন। হিন্দুত্বের রাজনীতি করবেন আদিত্যনাথ-অমিত শাহ। মাঠে নামে সঙ্ঘ পরিবারের কয়েকশো স্বেচ্ছাসেবক। মাথাপিছু প্রত্যেককে অন্তত একশো স্থানীয় হিন্দু পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
জঙ্গি ইয়াসিন ভাটকল থেকে কংগ্রেসের টিপু-প্রেম, সিদ্দারামাইয়ার মাংস খেয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়া— একের পর এক ঘটনা তুলে ধরে হিন্দু ভোটকে একজোট করার উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক প্রচারে নামে বিজেপি। ভোটের ফলেই স্পষ্ট, ওই কৌশল অনেকাংশেই খেটে গিয়েছে। উপকূল লাগোয়া কর্নাটকের ২১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপির ঝুলিতে এসেছে ১৮টি আসন। গত বারের চেয়ে ১৩টি বেশি। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৩টি। তারও অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ বলছে, ক্ষমতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার জন্য উপকূলবর্তী এলাকার খারাপ ফল অনেকটাই দায়ী।
কর্নাটকের জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ মুসলমান। উপকূলবর্তী এলাকায় বড় অংশই বাস করেন। সংখ্যালঘু ভোটের গোটাটা পাখির চোখ করেছিলেন সিদ্দারামাইয়া। পাল্টা চালে, ফুলপুর বা গোরক্ষপুরে হারা সত্ত্বেও কেবলমাত্র কর্নাটকের উপকূল এলাকায় প্রচারের জন্য উড়িয়ে আনা হয় আদিত্যনাথকে। এক নেতার কথায়, ‘‘কর্নাটকের ওই এলাকা যেমন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসিন ভাটকলের জন্মস্থান, তেমন সক্রিয় রাম সেনাও।’’ সেই কারণে পরিকল্পিত ভাবে তীব্র মেরুকরণের খেলায় নামে দল।
গত নভেম্বর থেকে কংগ্রেসের টিপু জয়ন্তী পালন আরও সুবিধা করে দেয় বিজেপির। অমিত থেকে যোগী, টিপুকে হিন্দু হত্যাকারী হিসেবে তুলে ধরে মুসলিম তোষণের অভিযোগে সরব হন। টিপুর মৃত্যুবার্ষিকীতে পাকিস্তানের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন বিতর্কে ইন্ধন জোগায়। প্রচারে নেমে আদিত্যনাথ বলতে থাকেন, কর্নাটকে জেহাদিদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে! তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে ফের মাথা চাড়া দেবে ভাটকলের মতো জঙ্গিরা। এদের রাজত্বে গরু বা দেশ কোনওটিই সুরক্ষিত নয়।’’ সিদ্দারামাইয়া মন্দিরে যাওয়ার দিনে মাংস খেয়েছেন, তা নিয়ে সরব হন অমিত শাহ।
মেরুকরণে হাতিয়ার হয় সোশ্যাল মিডিয়াও। সংখ্যালঘুদের হাতে সঙ্ঘ কর্মীদের হত্যার ভুয়ো ভিডিয়ো প্রচার করে হিন্দু ভোটকে একজোট করার কাজ চলতে থাকে। আজকের ফল বুঝিয়ে দিল, ছকটা খেটে গিয়েছে!