সঙ্ঘের চাপে মোদী, ব্যাখ্যা মুফতিরও

বিস্ফোরণের পরে ব্যাখ্যা। জঙ্গি, পাকিস্তান, হুরিয়ত সম্পর্কে মন্তব্যের অংশবিশেষ তুলে সংবাদমাধ্যম হইচই করেছে বলে আজ দাবি করলেন জম্মু-কাশ্মীর নতুন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ। বিজেপি সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গত কাল জম্মুতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই মুফতি বলেন, “কাশ্মীরে শান্তিতে ভোট হওয়ার জন্য জঙ্গি, পাকিস্তান ও হুরিয়তকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

জম্মুতে গার্ড অব অনারের সময় মুফতি সঈদ। সোমবার। ছবি: পিটিআই।

বিস্ফোরণের পরে ব্যাখ্যা। জঙ্গি, পাকিস্তান, হুরিয়ত সম্পর্কে মন্তব্যের অংশবিশেষ তুলে সংবাদমাধ্যম হইচই করেছে বলে আজ দাবি করলেন জম্মু-কাশ্মীর নতুন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ। বিজেপি সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

গত কাল জম্মুতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই মুফতি বলেন, “কাশ্মীরে শান্তিতে ভোট হওয়ার জন্য জঙ্গি, পাকিস্তান ও হুরিয়তকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, তাদের হাতে গোলমাল পাকানোর মতো লোক আছে। তারা গোলমাল পাকালে শান্তিতে ভোট হতো না।” স্বাভাবিক ভাবেই এতে তোপের মুখে পড়তে হয় পিডিপি ও বিজেপিকে। পরে বিজেপির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কাশ্মীরে শান্তিতে ভোট হয়েছে নির্বাচন কমিশন ও নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য। যাঁরা সংবিধানে বিশ্বাস করেন, তাঁরাই ওই ভোটকে সফল করেছেন।

আজ মুফতি জানান, তিনি মন্তব্য থেকে নড়ছেন না। তবে তাঁর বক্তব্যের বিশেষ অংশ নিয়ে হইচই হয়েছে। মুফতির কথায়, “পাকিস্তান, হুরিয়ত বুঝতে পেরেছে কাশ্মীরের মানুষের ভাগ্য ভোটার স্লিপের সঙ্গে জড়িত। ভারতীয় সংবিধানই মানুষকে ওই ভোটার স্লিপ ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে। আমি এ কথাই বলতে চেয়েছিলাম।” আজ মুফতির পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর মেয়ে, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও। মেহবুবার দাবি, “আমার বাবা কাশ্মীরে শান্তি চান। যদি হিংসা কমে আসে তা হলে পাকিস্তান-সহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলে আমরা মনে করি।” কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়িয়ে আজ পিডিপি বিধায়কদের একটি দল দাবি করেছে, অন্যায় ভাবে আফজল গুরুর ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সংসদেও আজ বিষয়টি নিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণ ভারতভুক্তি নিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। পরিস্থিতি সামলাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, ওই মন্তব্য কেন্দ্র সমর্থন করে না। গত কালও বিজেপির পক্ষ থেকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজেপি সূত্রের মতে, তাদের বেশ কিছু দাবি মুফতি মেনে নিয়েছেন। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ ও সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান খানিকটা নরম করেছেন। তাই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খুশি করতে তাঁকে যে কিছুটা সুর নরম করতে হবে, সেটা মোদী জানেন। ‘নরমপন্থী’ বলে পরিচিত মুফতি যদি হুরিয়ত ও পাকিস্তানকে কিছুটা সদর্থক বার্তা দিতে পারেন তাতেও আপত্তি নেই কেন্দ্রের। কারণ, মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। বিরোধীদের তোপকেও মোকাবিলা করতে তৈরি তিনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের চাপে ফেলেছে সঙ্ঘ পরিবার। সঙ্ঘের মতে, মুফতিকে অনেক বেশি জমি ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। জম্মুতে শ্যামাপ্রসাদের বলিদানের সময় থেকেই সঙ্ঘ তথা বিজেপির জমি তৈরি হয়েছে। উপত্যকার নেতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে সেই জমি হারানো ভুল হবে।

বিজেপি সূত্রের মতে, মোদী যে সঙ্ঘের প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন, মুফতি তা জানেন। তাই তিনিও বক্তব্যের অন্য ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন। কারণ, মোদীকেও মুফতিরই মতো কট্টরপন্থীদের সামাল দিতে হচ্ছে। মোদী চাপ সামলাতে না পারলে শ্রীনগরের মসনদ মুফতির হাতছাড়া হতে পারে। সেই ঝুঁকি নেবেন না ভূস্বর্গের মুখ্যমন্ত্রী।

ভারসাম্যের এই খেলা কত দিন চলে তাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন