Jammu-Kashmir Terror Attack

‘লজ্জায় মাথা হেঁট’, পহেলগাঁও জুড়ে প্রতিবাদ, সব দোকানপাট বন্ধ! আটকে পড়া পর্যটকদের আগলে আসিফ, আদিলেরা

জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পহেলগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বুধবার দিনভর দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্পূর্ণ ‘শাট ডাউনের’ ডাক দেওয়া হয়েছে স্থানীয় মসজিদগুলি থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৬
Share:

পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে স্থানীয়দের মিছিল। ছবি: পিটিআই।

৪৮ ঘণ্টা আগেও পর্যটকদের হাসি, আনন্দে মুখরিত ছিল উপত্যকা এলাকা। মঙ্গলবারের পর থেকে সেই পহেলগাঁওকে আর চেনার উপায় নেই। রাস্তাঘাট থমথম করছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সমস্ত দোকানপাট। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গুঞ্জন, ছোটখাটো জটলা থেকে ভেসে আসছে স্থানীয় ভাষায় বিলাপ। আর চলছে মিছিল। মঙ্গলবার রাত থেকে পহেলগাঁওয়ের রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছেন বহু স্থানীয় মানুষ। মোমবাতি নিয়ে মিছিল করছেন তাঁরা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, নিরীহদের হত্যার বিরুদ্ধে সেই মিছিল থেকে উঠছে স্লোগান। কাশ্মীরিরা বলছেন, ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ’, ‘আমরা ভারতীয়’। এখনও পহেলগাঁওয়ে যে সমস্ত পর্যটক আটকে আছেন, তাঁদের আগলে রেখেছেন স্থানীয়েরাই।

Advertisement

জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পহেলগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বুধবার দিনভর দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সম্পূর্ণ ‘শাট ডাউনের’ ডাক দেওয়া হয়েছে স্থানীয় মসজিদগুলি থেকে। প্রায় সকলেই সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন। অনেকের মতে, গত ৩৫ বছরে কাশ্মীরে এই চিত্র দেখা যায়নি। পহেলগাঁওয়ের দোকানি এবং হোটেল ব্যবসায়ীরা বুধবার সকালেও একটি মিছিলে হেঁটেছেন। হোটেল মালিকেরা জানিয়েছেন, আটকে থাকা পর্যটকদের সব রকম সাহায্য করা হবে। তাঁদের কোনও অসুবিধা যাতে না-হয়, খেয়াল রাখা হবে। আগামী ১৫ দিন এই সমস্ত পর্যটকের জন্য বিনামূল্যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আসিফ বুরজ়া এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘‘যা হয়েছে, সেটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এটা পর্যটন বা অর্থনীতির বিষয় নয়। লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’ পর্যটকদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওঁদের কী দোষ ছিল? ওঁরা তো এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। আমরা শুধু ওই পরিবারগুলোর কথা ভাবছি।’’ পহেলগাঁওয়ের একটি প্রতিবাদ মিছিল থেকে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদ দমনে প্রশাসন এবং ভারতীয় সেনা যা সিদ্ধান্ত নেবে, তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে তাঁদের। স্থানীয়দের কথায়, ‘‘যদি আমাদের কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা প্রস্তুত। আমরা সেনাবাহিনীর পাশে আছি। আমরা এটা সহ্য করব না। আমরা তো মানুষ। অন্তর থেকে আমরা ব্যথিত। এটা টাকা বা ব্যবসার বিষয় নয়।’’

Advertisement

সমাজমাধ্যমেও পহেলগাঁওয়ের প্রতিবাদের একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে স্থানীয়দের মোমবতি মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। স্লোগান উঠেছে, ‘নিষ্পাপদের হত্যা বন্ধ করো। পর্যটকেরা আমাদের প্রাণ। পর্যটকদের হত্যা বন্ধ করো।’’ অনেককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না। সারা দিন কিছু খাইনি। আমরা বিচার চাই।’’ (যদিও এই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)

পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলায় মঙ্গলবার ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে জঙ্গিরা। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে বেছে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে বাদ দিয়ে বাকিদের হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়েরা অনেকেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন। বৈসরন উপত্যকার ঘটনাস্থলে পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন সইদ আদিল হুসেন শাহ। পর্যটকদের টাট্টু ঘোড়ায় চড়ানো ছিল তাঁর পেশা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাকিদের বাঁচাতে এক জঙ্গির হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন সইদ। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement