পঞ্জাবে হই-হই করে ঢুকছেন। তাঁকে তাই দিল্লিতে বেঁধে রাখা দরকার। আবার পঞ্জাবে কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করতেও দরকার তাঁকে। অরবিন্দ কেজরীবালকে নিয়ে তাই দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দু’টি বিষয় নিয়ে গত ক’দিন ধরেই তোলপাড় চলছে দিল্লিতে। এক, ট্যাঙ্কার কেলেঙ্কারিতে শীলা দীক্ষিতের পাশাপাশি কেজরীবালের বিরুদ্ধেও এফআইআর করেছে বিজেপি। দুই, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপির দিল্লির সাংসদ মহেশ গিরি এক পুর-অফিসারের হত্যায় জড়িত। যার প্রতিবাদে কেজরীবালের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেছেন মহেশ। গত কাল সুব্রহ্মণ্যম স্বামী সেই ধর্নামঞ্চে গিয়ে তাতিয়ে এসেছেন বিরোধ। আজ সেখানে যান স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তাঁর অনুরোধে ধর্না তুলে নেন বিজেপির সাংসদ।
জোড়া ঘটনার পিছনে লুকিয়ে আছে বিজেপির কৌশল। কারণ, কেজরীবালের দল যে ভাবে পঞ্জাবে দাপট বাড়াচ্ছে, তাতে বিজেপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, দিল্লির পরে সে রাজ্যেও ক্ষমতা দখল করে নিতে
পারে আম আদমি পার্টি। এমনিতেই পঞ্জাবে অকালি-বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে হাওয়া আছে। তাই কেজরীবালকে দিল্লিতে বেঁধে রাখতে কখনও তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করছে বিজেপি।
কখনও আবার বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করার কথা যাদের, সেই দিল্লি পুলিশের মুখিয়া রাজনাথ সিংহই চলে যাচ্ছেন মহেশ গিরির ধর্নামঞ্চে। পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁর। বিজেপি এ ভাবে সুকৌশলে কেজরীবালকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁকে প্রাসঙ্গিকও করতে রাখতে চাইছেন।
বিজেপি সূত্রের মতে, এর কারণ একটাই। পঞ্জাবে কেজরীবাল যত শক্তিশালী হবেন, তত তাঁর দল কংগ্রেসের ভোট কাটবে। অর্থাৎ অকালি-বিজেপির বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হবে। আবার কেজরীবালের শক্তি যদি খুব বেড়ে যায়, তা হলে অকালি-বিজেপির সরকার ফেলে দিয়ে তাঁরাই ক্ষমতায় চলে আসতে পারেন পঞ্জাবে। তাই তাঁকে দিল্লিতেই ব্যতিব্যস্ত করে রাখতে চাইছে বিজেপি।
কেজরীবাল এই কৌশল বুঝতে পারছেন না, তা নয়। এ দিন সকালেই টুইট করে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীজি, আপনার লড়াই যে সরাসরি আমার সঙ্গে, সেটি কবুল করেছেন বলে তাকে স্বাগত জানাই।’’ এর পরে নিজের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর বিরোধিতা করেও তিনি সরাসরি নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বোঝাতে চান, তাঁকে ভয় পাওয়ানো অত সহজ নয়। কেজরীবালের কথায়, ‘‘আমি সনিয়া গাঁধী বা রাহুল গাঁধী নই, যে আমাকে এ ভাবে ভয় পাওয়ানো যাবে। রবার্ট বঢরাও নই, যে কোনও গোপন সমঝোতা করতে পারবেন। মোদী সরকার গাঁধী বা বঢরাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে না, কিন্তু আমাকে নিশানা করে।’’
আপ নেতাদের অবশ্য বক্তব্য, বিজেপি যত রকমের কৌশলই নিক না কেন, পঞ্জাবের নির্বাচনে কোনও ভাবেই ঠেকানো যাবে না আম আদমি পার্টিকে। সেখানে বিজেপি-অকালি সরকারের বিরুদ্ধে হাওয়া এতটাই জোরদার যে আপই সেখানে সরকার গড়বে। দিল্লিতে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কৌশল ভেস্তে দেওয়ার জন্য কেজরীবাল একাই একশো!